X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

বিসমিল্লাহর বদলে ৭৮৬ লেখা যাবে কী?

বেলায়েত হুসাইন
২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:১৪আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪১

ইসলামি নিয়মানুসারে মুসলমানদের প্রতিটি কাজের শুরু হবে ‘বিসমিল্লাহ’ তথা আল্লাহর নামের মাধ্যমে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া না হলে, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)। এজন্য বিসমিল্লাহ দ্বারাই মুসলমানদের প্রতিটি কাজ শুরু করা উচিত।

কিন্তু আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিমদের মধ্যে বিসমিল্লাহর বদলে ৭৮৬-সংখ্যাটি ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষত পাকিস্তান, ভারত এবং মিয়ানমারের অনেক মুসলিম ৭৮৬ সংখ্যাটিকে বিসমিল্লাহর মতোই গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান করেন।

এজন্য এ অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিমদের বড় একটা অংশ ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, হ্যান্ডবিল, সাইনবোর্ড, চিঠিপত্র, হিসাবের খাতা, দাওয়াতনামা ইত্যাদি বস্তুগুলোর শুরুতে বিসমিল্লাহর বদলে ৭৮৬ সংখ্যাটি লেখেন।

কিন্তু তাদের অনেকেই আসলে জানেন না যে- উপরোল্লিখিত সংখ্যাটার মূল রহস্য আসলে কী? তবে তারা এতটুকু বিশ্বাস করেন যে- সংখ্যাটি দ্বারা বিসমিল্লাহ বোঝানো হয়। 

আসলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’র যে আরবি রূপটি রয়েছে, তার নিউমারোলজিক্যাল তথা সংখ্যাতাত্ত্বিক মান ৭৮৬-এর সমান। সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে এই হিসাবটিকে আবজাদি বলা হয়। আরবি বর্ণমালার ২৮টি হরফ দিয়ে মোট ৮ ভাগে এই হিসাবকে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- আবজাদ, হাওয়্যাজ, হুত্তি, কালমান, সা‘ফাছ, কারশাত, ছাখ্খাজ ও দাযাগ। বর্ণিত আছে যে, প্রাচীনকালে এক রাজার ৮ জন পুত্র ছিল এবং তাদের নামগুলো গঠিত ছিল ২৮টি আরবি বর্ণমালার সমন্বয়ে। ওই নামগুলোর ভিত্তিতেই এই ‘আবজাদি’ হিসাব চালু হয়।

আবজাদি হিসাবের ৮টি নামে ব্যবহৃত হরফগুলোর মান উল্লেখ করা হলো-

(১) আবজাদ: আলিফ, বা, জীম, দাল। সংখ্যাতাত্ত্বিক মান- যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪। (২) হাওয়্যাজ: হা (ছোট) ওয়া, ঝা। মান- যথাক্রমে ৫, ৬, ৭। (৩) হুত্তি: হা (বড়) ত্বা, ইয়া। মান- যথাক্রমে ৮, ৯, (দশক হিসেবে) ১০। (৪) কালমান: কাফ (ছোট), লাম, মীম, নূন। মান- যথাক্রমে (দশক হিসাবে ) ২০, ৩০, ৪০,৫০। (৫) সাআফাছ: ছীন, আইন, ফা, সোয়াদ। মান- যথাক্রমে ৬০, ৭০, ৮০, ৯০। (৬) করশাত: ক্বফ (বড়), রা, শীন, তা। মান- যথাক্রমে (শতক হিসাবে) ১০০, ২০০, ৩০০, ৪০০। (৭) ছাখ্খাজ: ছা, খা, যাল। মান - যথাক্রমে ৫০০, ৬০০, ৭০০। (৮) দাযাগ: দোওয়াদ, যোওয়া, গাইন। মান- যথাক্রমে ৮০০, ৯০০, (সহস্র হিসাবে) ১,০০০।

এই হিসাব অনুযায়ী বিসমিল্লাহ-তে ব্যবহৃত হরফগুলোর মানের যোগফল হয় ৭৮৬। মূলত এই বিবেচনাতেই অনেকে বিসমিল্লাহর বদলে এ সংখ্যাটি ব্যবহার করেন। এদের অনেকের আবার ধারণা যে- যদি এমন সব বস্তুতে বিসমিল্লাহ লেখা হলো, ব্যবহার শেষে যা ফেলা দেওয়া হয়, তাহলে তো আল্লাহ ও পবিত্র বাক্য বিসমিল্লাহর সম্মানহানি হবে। সেই বিশ্বাস থেকেই অনেকে সরাসরি বিসমিল্লাহ লেখা এড়িয়ে চলেন এবং তার স্থলে বিসমিল্লাহর আবজাদি মান ৭৮৬ সংখ্যাটি লেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

তবে বিসমিল্লাহর বদলে ৭৮৬ সংখ্যা ব্যবহার করার এই যে প্রথা, এটি হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আমলে চালু হয়নি; বরং বলা হয় যে- এই সংখ্যার ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় আব্বাসিদের শাসনামলে। এরপর আরবি, ফার্সি, উর্দু কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলিতেও আবজাদি হিসাবের ব্যবহার খুব জনপ্রিয়তা পায়। একই সঙ্গে অনেকে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের সংখ্যাতাত্ত্বিক আয়াতগুলোর মান নির্ণয় করে তাবিজের বই-পুস্তকে তা ব্যবহার করেন।

তবে ইসলামি ফিকহের আলোকে বিসমিল্লাহর বদলে ৭৮৬ কিংবা অন্য কোনও শব্দ লিখলে বিসমিল্লাহ লেখার সুন্নত আদায় হবে না এবং বিসমিল্লাহর সওয়াবও পাওয়া যাবে না। আর যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে, লিফলেট, পোস্টার বা এ ধরনের কাগজের টুকরো, যেগুলো সাধারণত সংরক্ষণ করা হয় না সেসব কাগজে বিসমিল্লাহ লিখলে, এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে এবং বিসমিল্লাহর অবমূল্যায়ন হবে, তাহলে এসব ক্ষেত্রে তথা লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি শুরু করার সময় লেখার বদলে মুখে মুখে বিসমিল্লাহ পড়ে নেওয়া উচিত। আর বিসমিহি তাআলা লিখলে আল্লাহর নামে শুরু করার ফজিলত তো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম লেখার সুন্নাত আদায় হবে না।

তথ্যসূত্র: শরহু মুসলিম, নববী ২/৯৮, রদ্দুল মুহতার ১/৯, মাআরিফুস সুনান ১/২, আহসানুল ফাতাওয়া ৮/২৪, ফাতাওয়া উছমানি ১/১৬৩ ও একাধিক ওয়েবসাইট।

 

/এসটিএস/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ ফিউশন খাবার উপস্থাপনা
ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ ফিউশন খাবার উপস্থাপনা
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপ শেডে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপ শেডে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ অবসান চান নেতানিয়াহু
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ অবসান চান নেতানিয়াহু
বাগেরহাট বন বিভাগের ৩ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ
বাগেরহাট বন বিভাগের ৩ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ
সর্বাধিক পঠিত
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
রিজার্ভ আরও বাড়লো
রিজার্ভ আরও বাড়লো
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’