বিএনপিকর্মী মকবুলকে হত্যার অভিযোগে করা পল্টন থানার মামলায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। শুক্রবার (১ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট মেহরা মাহবুবের আদালতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির। গত ১৩ জুলাই তিনি আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন। তার সেই বক্তব্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। কোটা আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও সেই বক্তব্য শেয়ার করেছিলেন। তিনি (উবায়দুর মোকতাদির) আজকের পরিবর্তিত বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন।’
এ আইনজীবী আরও দাবি করেন, উবায়দুল মোকতাদির ফ্যাসিস্টের কোনও সহযোগিতা করেননি। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য লড়াই করেছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। কোনও অবৈধ কাজে জড়িত ছিলেন না। এ হত্যার সঙ্গে তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। ২০২১ সালের মোকতাদিরের হার্টে ৫০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়েছে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আসামির রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।’
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর সচিব হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতি খুশি হয়ে শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্ব উপহার দিয়েছেন। তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন রাম-রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়ে তিনি হাজার হাজার কোটি আত্মসাৎ করে তা পাচার করেছেন। মানুষ হত্যা, খুন, ঘুম করতে সহযোগিতা করেছেন। রাষ্ট্রের কর্মচারীর কাজ জনগণকে সহযোগিতা করা; সেটা তিনি করেননি। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য তার (শেখ হাসিনা) নামে একটি প্রজেক্ট পর্যন্ত তৈরি করেছেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করে এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘কোটা আন্দলোনের পক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমি কোথাও দেখিনি। এখানে মিডিয়াকর্মীরাও আছেন তারাও দেখেননি। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রবার্ট মুগাবে। তিনি ওই দেশটাকে স্বাধীন করেছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে নানান অন্যায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব কারণেই তিনি শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন। উবায়দুল মোকতাদির আন্দোলনের পক্ষেও ছিলেন না। তিনি সবসময় ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। আসামির সর্বোচ্চ ১০ দিনের রিমান্ড চাচ্ছি।’
এরপর বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে হট্টগোল, পরবর্তী সময়ে আদালতে সম্মান বাজায় রাখার নির্দেশ
উবায়দুল মোকতাদিরের শুনানি চলাকালে এ দিন আদালতে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিচারক আদালতের সম্মান বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
এদিন প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর রিমান্ডের পক্ষে অবস্থান নেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যর শেষের দিকে বিচারক বলেন, আরও কি কারও কিছু বলার আছে? তখন আসামিপক্ষে আইনজীবী আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
এ কথার বিরোধিতা করে এপিপি নয়ন আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধভাবে নির্বাচিত মন্ত্রী, ভোট চোরের এমপি। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়ান। আদালতের পরিবেশ উত্তেজিত হয়।
তখন বিচারক বলেন, আপনারা সকলে কোর্টের মানসম্মানটা বজায় রাখেন। পিপিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার লোকদের সামলান। এগুলো হলে, আপনারই সম্মান ক্ষুণ্ন হবে। আপনি যখন কথা বলবেন, সবাই যেন চুপ থাকে। সেই বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করবেন। নেক্স টাইম কোর্টের সম্মান, সিনিয়রদের সম্মান বাজার রাখবেন।
গত ৩১ অক্টোবর রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর একদফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। ৭ ডিসেম্বর ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। কার্যালয়ের পাশে অবস্থান করা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় মাহফুজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৩৫ নং আসামি হলেন শহিদুজ্জামান সরকার।
উবায়দুল মোকতাদির ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।