শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈষম্যহীন, মানসম্মত ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘শিক্ষা অধিকার সংসদ' নামে একটি সংগঠন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশকরে সংগঠনটি।
‘শিক্ষা অধিকার সংসদ' সংগঠনটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক এমনিয়াজ আসাদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
এ ছাড়া সংগঠনটির নির্বাহী সদস্যদের অন্যতম মিসবাহুর রহমান আসিম, মাহফুজুর রহমান মানিক, ওমর ফারুক, রমিজুল ইসলাম রুমি ও মিনহাজুল আরেফিন।
অধ্যাপক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীরা হতাশ। তাদের যে আস্থাহীনতা; তারা যে ডিগ্রিটা লাভ করছেন, সেটার মান নিয়ে হোক বা যারা তাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দিচ্ছেন, সেটি নিয়ে হোক বা শিক্ষকদের যে আচরণ, সেটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা, সেটি পূরণ হচ্ছে না। এটা কিন্তু সর্বস্তরে। একেবারে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত। এই পুরো সিস্টেমে যে সংকট, সে সংকট মোকাবিলার জন্য আজকের এই নতুন উদ্যোগ।
শাহনেওয়াজ চন্দন বলেন, বিগত ১৫ বছরের দুর্নীতি জর্জরিত ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশের যে কয়টি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা। সব খাতে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন হলেও শিক্ষা খাতে সংস্কারে কোনো কমিশন হয়নি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক প্রকল্পের বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা হয়েছেন গিনিপিগ, আর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ওরাজনীতিবিদরা পকেটে পুরেছেন কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ধসে পড়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এর সঙ্গে করোনার সময়ে শিক্ষা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনায় যে শিখন গ্যাপ বা শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তাতে শিক্ষায় বাংলাদেশএকটি পলিক্রাইসিসের সম্মুখীন। এ অবস্থায় শিক্ষা অধিকার সংসদ বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার এনে শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈষম্যহীন, মানসম্মত ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক ভূত তাড়াতে হবে এবং তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণসহ মাধ্যমে সংস্কার এজেন্ডাকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে শিক্ষা অধিকার সংসদের আত্মপ্রকাশ।
এ সময় তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু সাধারণ প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো:
স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন করা; শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন আধুনিকায়ন করা; শিক্ষা মান যাচাই ব্যবস্থার আন্তর্জাতিকীকরণ; এডুকেশন পারফরম্যান্স ডেলিভারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা; পাঠদানের ব্যাঘাত প্রতিরোধে শিক্ষা রক্ষাকবচ চালু; নিরাপদ ওঅন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাঙ্গনের নিশ্চায়তা; শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি; শিক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা; শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনকে বিয়াজনীতিকরণ করা; শিক্ষকদের পুনঃপ্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়ানো; বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ন্ত্রিত প্রসার সংকোচন ও মানের পুনর্মূল্যায়ন করা; উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক সংস্কার সাধন করা; শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব, ক্ষমতায়ন ও কার্যকর ছাত্র-সংসদ প্রতিষ্ঠা করা; উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।