দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে। তবে যাত্রী কম পাওয়ার আশঙ্কায় ও খরচ বাঁচাতে সপ্তাহের এই একদিন আধাবেলা করেই ট্রেন চলাচলের সীমাবদ্ধতা করে দেয় পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এছাড়া মেট্রোরেল চলাচলের হেডওয়ের (মধ্যবর্তী সময়) মধ্যেও কিছুটা লম্বা বিরতি রাখা হয়। তবে ধারণা থেকে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। শুরু থেকেই ছুটির দিনে মেট্রোরেলে যাত্রীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। হেডওয়ে দীর্ঘ হওয়ায় যাত্রীদের চাপ আরও বেড়েছে। তাই যারা ছুটির দিনে আনন্দ করতে মেট্রোরেল ভ্রমণে আসছেন, ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুক্রবারের মেট্রোরেল চলাচলের সময়সূচি হলো- উত্তরা উত্তর হতে মতিঝিল রুটে দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর রুটে দুপুর ৩টা ৫০ মিনিট থেকে রাত ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। এই দিন হেডওয়ে রাখা হয়েছে ১২ মিনিট করে। যাত্রীদের দাবি, এই সময়টা অপেক্ষা করার জন্য দীর্ঘ, তাই হেডওয়ে সময় কমিয়ে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।
চালু হওয়ার তৃতীয় শুক্রবার (৪ অক্টোবর) কথা হয় বিভিন্ন স্টেশনের প্লাটফর্মে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে। তারা বলেন, একটি ট্রেনের জন্য ১২ মিনিট অপেক্ষা করাটা ধৈর্যের বিষয়। তাছাড়া শুক্রবারও যথেষ্ট ভিড় থাকে। হেডওয়ে দীর্ঘ হওয়ায় প্লাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়াতে থাকে। তখন এতগুলো যাত্রী এক সঙ্গে কোচে ওঠা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। কখনও কখনও উঠতে না পেরে ট্রেন মিসের কথাও জানালেন কয়েকজন যাত্রী।
তবে শুক্রবার মেট্রোরেল চালু থাকায় সুবিধার কথাও জানিয়েছেন যাত্রীরা। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়াসহ সন্ধ্যায় বাসের ভিড় ঠেলতে হচ্ছে না বলে জানান তারা।
মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশন থেকে ওঠা যাত্রী নিকিতা বড়ুয়া বলেন, লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়েছি। এখন এখানেও (প্লাটফর্ম) দাঁড়ানো বেশ কিছুক্ষণ ধরে, ট্রেন আসছে না। এই সময়টা একটু কমিয়ে আনলে ভালো হয়। তা না হলে আধাঘণ্টা কেবল স্টেশনেই কেটে যায়।
কাজীপাড়ার স্টেশন থেকে ওঠা যাত্রী নোমান খান বলেন, মিরপুর ১০ বন্ধ থাকায় কাজীপাড়ায় এখন যাত্রীদের ভিড়। অন্য সময় কাজের জন্য যাত্রীরা মেট্রোরেল ব্যবহার করে। কিন্তু শুক্রবারে অধিকাংশ যাত্রীদের দেখে মনে হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন। তারা অধিকাংশই দল বেঁধে আসছেন, ট্রেনে উঠতেও চান দল বেঁধে। কিন্তু ট্রেন তো আগের স্টেশন থেকেই যাত্রী ভরে আসে। এই প্লাটফর্মেও লম্বা সময় ধরে যাত্রীরা জমা হতে থাকেন। সব মিলিয়ে বলা চলে হযবরল অবস্থা। শুক্রবার বলে যাত্রী কম হবে এই ধারণা ভুল। চাপ সামলাতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো অর্থাৎ হেডওয়ের সময় কমিয়ে আনতে হবে।
কাজীপাড়া স্টেশনে পরিবার নিয়ে আসা যাত্রী সুজন হাসান বলেন, শুক্রবার ছাড়া পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার সুযোগ কম। এতদিন শুক্রবার মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আগ্রহ হতো না বের হওয়ার। এখন ভালো লাগছে। দ্রুতই কোথাও যাওয়া যাচ্ছে। তবে ভিড় অনেক। একটা ট্রেন মিস করেছি। সবাইকে নিয়ে উঠতে পারিনি। পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় আছি। এখানেই আধা ঘণ্টা চলে যাচ্ছে। টিকিট নিতেও সময় লেগেছে। প্রায় এক ঘণ্টার মতো। তবুও ছেলেপেলে মেট্রোরেলে চড়বে এই আনন্দের জন্য আসা।
এ বিষয়ে জানতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেট্রোরেলের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছুটির দিনে চলাচলের মাত্র তিনটি শুক্রবার গেলো। আমরা অবজারভ করছি সব।’