৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশে পাল্টা আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ বাহিনী। থানাগুলোতে হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ক্ষুব্ধ জনতার হামলা থেকে সেদিন রক্ষা পায়নি ডিএমপির ভাটারা থানাও। ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে ঘটনার দেড় মাস পরেও এই থানার পুলিশ নিজস্ব ভবনে কাজ শুরু করতে পারেনি। অস্থায়ীভাবে ভাটারা থানার কাজ চলছে এখন গুলশান থানার একটি ভবনে।
ভাটারা থানার পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিকালে শত শত ক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো থানা কমপ্লেক্স। ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে ঘটনার দেড় মাস পরেও ভাটারা থানা পুলিশ তাদের নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। বর্তমানে এই থানার কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হচ্ছে গুলশান থানা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত নতুন একটি ভবনে। বর্তমানে ভাটারা থানা ভবন মেরামতের কাজ চলছে।
রবিবার (২২ আগস্ট) বিকালে গিয়ে দেখা যায়, গেটে লাগানো থানার সাইনবোর্ডটি ভাঙা ও তিন তলা ভবনের ওপরের দিকের দেয়ালজুড়ে আগুনে পোড়া কালো দাগ। থানার প্রধান ফটকের বাইরে পড়ে আছে আগুনে পুড়ে যাওয়া অনেক গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ধ্বংসস্তূপ। গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই কয়েকজন পুলিশ সদস্যের দেখা মেলে। জানা গেলো তারা পাহারায় রয়েছেন। থানা ভবনের ভেতরে চলছে মেরামতের কাজ। এসময় কিছু লোক থানায় সেবা নিতে আসেন। তাদের জানানো হয়—ভাটারা থানার কার্যক্রম চলছে গুলশান থানার নতুন ভবনে। বাড্ডা থেকে রবিবার বিকালে অভিযোগ নিয়ে ভাটারা থানায় আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুইটি বেগম। পরে তিনি গুলশানে যান। মোবাইল ফোন চুরি হওয়ায় কালাচাঁদপুর থেকে জিডি করতে এসেছিলেন রিকশাচালক জেহের আলী। তিনিও গুলশান থানা ক্যাম্পাসে যান। সেখানকার একটি নতুন ভবনে চলছে ভাটার থানার কার্যক্রম। জেহের আলী তার ফোন হারানোর বিষয়ে জিডি করেন।
ভাটারা থানায় দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ৫ আগস্টের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, হামলার সময় ওসিসহ ১০০ জনের মতো কনস্টেবল ও কর্মকর্তা থানায় অবস্থান করছিলেন। তাদের উদ্ধার করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কাছে ফোন করতে দেখেছেন ওসিকে। তবে ওপর মহল থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। হাজার হাজার লোক থানা ঘেরাও করে ফেলে। তারা হামলা, লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ভবনের ছাদে ওঠেন। সেখানে টিকতে না পেরে ভবন-সংলগ্ন গাছ বেয়ে নিচে নেমে জনতার মাঝে মিশে পালিয়ে যান। ছাদ থেকে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কেউ কেউ নিরাপদে চলে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
এই থানার মালখানা সূত্রে জানা যায়, হামলা ও অগ্নিসংযোগের কারণে বিভিন্ন মডেলের ৩৫টি প্রাইভেটকার, ১০০টি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। ৪০০ মোবাইল ফোন, ৫টি ল্যাপটপ ও ২৫টি কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল লুট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ডলারসহ নগদ ৬ লাখ টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণ ও কষ্টিপাথর লুট হয়ে গেছে। এসবের বেশিরভাগই বিভিন্ন মামলায় জব্দ করে থানায় রাখা হয়েছিল।
ভাটারা থানার মালখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই সামছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লুট হওয়া ও আগুনে পুড়ে যাওয়া মালামাল ফেরত চেয়ে অনেকে এখন ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন। তারা বলছেন মাল ফেরত না পেলে আমার নামে মামলা করবেন। আমি কীভাবে ফেরত দেবো। কোথায় পাবো। বোঝাতে চাইলেও তারা মানতে চাইছেন না।
এ প্রসঙ্গে ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভাটারা থানার ৪৫টি সরকারি অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে কিছু উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। থানায় আগে ৫টি টহল গাড়ি ছিল, এখন তিনটি আছে। নতুন দুটির অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই যুক্ত হবে। তবে আমাদের নিজেদের ভবনে এখনও যেতে পারিনি।
তিনি জানান, ঘটনার পর থেকেই গুলশান থানার নতুন ভবনে আমরা অফিস করছি। নিজস্ব অবকাঠামো ছাড়া কোনও সমস্যা নেই।
ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার এইচএম শফিকুর রহমান বলেন, ভাটারা থানার নিজস্ব ভবনে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। পুরোপুরি চালু হতে আরও সময়ের প্রয়োজন। থানার গাড়ি সংকট থাকায় টহলও সীমিত হচ্ছে। তবে দ্রুতই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবো। ডিএমপির সদর দফতর থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম