আলোচিত ত্বকী হত্যায় ১১ বছরে বিচারহীনতা ও হত্যার সঙ্গে শামীম ওসমান এবং তার পরিবার জড়িত অভিযোগ করে— অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছে তার বাবা রফিউর রাব্বি।
শনিবার (৭ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ‘সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ’। সেখানে এ দাবি জানান ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
তিনি বলেন, ত্বকীকে অপহরণ করা হয়েছিল। ওই রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয় এবং এর দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে। সে রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ড বিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির তদন্ত প্রথমে পুলিশ শুরু করলেও যখন তারা নিশ্চিত হয়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার জড়িত, তখন তারা এ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে অপারগতা প্রকাশ করে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে তখন মামলাটির তদন্ত-ভার র্যাবের ওপর ন্যস্ত হলে তারা সে বছর ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন এবং ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ভ্রমর নামে দুজন ঘাতকের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দিতে তারা ত্বকীকে হত্যার বিশদ বিবরণ দেয়। বিবরণে উল্লেখ করে— সে সময়ের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে এবং শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের নির্দেশে তার টর্চার সেলে ত্বকীকে রাত ১২টার আগেই হত্যা করা হয়েছে।
১৭ বছরের কিশোর ত্বকীকে সবাই মিলে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করার পর বুকের ওপর উঠে গলা টিপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। চোখ উপড়ে আনে, দেহের বিভিন্ন অংশ থেতলে দেয়। পরে আজমেরীর গাড়িতে করেই ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দিয়ে সেই টর্চার সেলে ফিরে গিয়ে বিরিয়ানী খায়। ৭ আগস্ট র্যাব আজমেরী ওসমানের ‘উইনার ফ্যাশন’ খ্যাত সেই টর্চার সেলে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে তারা দেয়ালে ও আসবাবপত্রে গুলির চিহ্ন দেখতে পায় এবং সেখান থেকে রক্তমাখা প্যান্ট, দড়ি, রক্তমাখা গজারির লাঠি, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি, পিস্তলের অংশসহ বিভিন্ন বস্তু আলামত হিসেবে সংগ্রহ করে।
ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় ৫ মার্চ ২০১৪ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হাসান র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ত্বকী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেন। তারা উল্লেখ করেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ হিসেবে তারা তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেন।
কিন্তু ২০১৪ সালের ৩ জুন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা জানানোর পর থেকেই ত্বকী হত্যার সব তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমাদের বিচারের এই দাবিকে স্তব্ধ করার জন্য শামীম ওসমান বিভিন্নভাবে আমাদের ওপর হামলা, নির্যাতন চালিয়েছে। আমাদের বাড়ি-ঘরের ইট খুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে, টুকরো-টুকরো করে কেটে নদীতে ফেলে মাছ দিয়ে খায়ানোর হুমকি দিয়েছে। কিন্তু বিচারের দাবি থেকে আমাদের কোনোভাবে সরাতে পারেনি।
ত্বকীর বাবার বলেন, আজকে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগী নারায়ণগঞ্জের এই মাফিয়াগোষ্ঠী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। দেশের পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজকে জুলাই শহীদদের হত্যার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্বকী, সাগর-রুনী, তনুসহ ওসমান পরিবারের হাতে সংঘটিত নারায়ণগঞ্জের সব হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করবে।