রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড় দেখতে গিয়ে সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বঙ্গমার্কেটের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের দোতলায় এমন ঘটনা ঘটে।
তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূইয়া ও জাগো নিউজের সাংবাদিক নাহিদ হোসেন।
তারা জানান, তাদের দোকানে ডেকে নিয়ে কাউন্সিলর চামেলির অনুসারীরা হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে। ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে এবং এ ঘটনায় এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যাক্ষদর্শীরা।
ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, শাহবাগ থানার ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলির স্বামী আবুল হোসেন টাবু ও বিএনপির পদপ্রত্যাশী নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপন, শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফ।
ঘটনায় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূইয়াকে কক্ষের মেঝেতে ফেলে মাথায়, পিঠে, কোমরে, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদকে দোতলায় মারার পর ছাদে তুলে পেটানো হয়। তিনি বাম পায়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় এক শিক্ষার্থীর ডান হাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলা হয়। মারধরের একপর্যায়ে আল সাদীর মোবাইল ছিনতাই করে আক্রমণকারীরা। নাহিদের মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি, প্রেস আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, আমি ও আমার সাবেক কলিগ নাহিদ ভাই বঙ্গবাজারে বঙ্গ ইদলামিয়া মার্কেটে কাপড় দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মার্কেটের মালিকপক্ষের কেউ আমাদের চিনতে পেরে বলে, সজল ভাই ওপরে আছেন। তখন আমরা ওপরে গিয়ে দেখি একটা পক্ষ দরজা ভাঙচুর করছে। তারা মার্কেটের অন্য পক্ষের লোক। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাউন্সিলর চামেলির ভাই স্বপন ও স্বামী টেবু।
তিনি বলেন, আমরা যখন সজল ভাইয়ের অফিসে যাই, তখন টেবুর ও স্বপনের নেতৃত্বে উপস্থিত আমাদের সবার ওপর হামলা করা হয়। আমরা সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর তারা হামলা করে। এমনকি আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে আমাদের ওপর বেশি হামলা করে। বের হয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে আসি। পুলিশের সামনেও তারা আমাদের মারার চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।
নাহিদ বলেন, মার্কেটের গেট ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ সময় সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়েও কোনো রেসপন্স পাইনি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলাম, তবু ছাত্রলীগ বলে পিটাইছে আমাদের। আমার ফোন, মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড সব নিয়ে গেছে তারা। পরে রুম থেকে বের করে এনে ছাদে নিয়ে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ দিয়ে আবার মারছে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তাদের কাছে পানি চেয়েছি কিন্তু দেয়নি। তারা বলছিল, আমাকে পানি খাওয়ালে আমি নাকি আবার সুস্থ হয়ে যাবো, এই বলে আমার সমস্ত শরীরে আঘাত করেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্বৃত্তকারীদের মধ্যে একজন বলছিল, এ জ্ঞান হারানোর অভিনয় করছে, একে আবার মারা হোক, এই বলে তৃতীয় ধাপে আবার মারপিট করছে। তারা আমার ম্যানিব্যাগ, প্রেসের কার্ড, আইডিকার্ড নিয়ে যাওয়ার সময় বলছিল, এগুলো স্বপন ভাইয়ের কাছে জমা দিবো। স্বপন হলো বিএনপির নেতা।
এ বিষয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ী বাধন বলেন, এই মার্কেটে আমার দোকান আছে। আমি মালিকের (সজলের) সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মালিকের আরেক পক্ষ যারা আওয়ামী লীগ করতো, তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন বাথরুমে অবস্থান নিলে তারা দরজা ভেঙে হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে। টাবু আওয়ামী লীগ করে। তার শেল্টারে তার আপন ভাই ইউসুফ এত দিন ব্যবসা করে আসছে। সে বিএনপিতে নাম লিখিয়ে রাখছে যেন বিএনপি ক্ষমতায় একটা পজিশন তৈরি করতে পারে। তারা একজন আওয়ামী লীগ করে আরেকজন বিএনপি করে। তারা একে অপরকে রক্ষা করে।
ঘটনার একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা সেখানে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পুলিশকে আহ্বান জানান। সারজিস আলম বলেন, আমরা আজ সাংবাদিকসহ অন্যদের ওপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই সিন্ডিকেট যারা আজ সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের আমরা ছাড় দেবো না। আজকের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
এই ঘটনায় রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচার দাবি করে মানববন্ধন করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
একই ঘটনা প্রতিবাদ জানিয়ে ও বিচার দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। ছাত্রদল সভাপতি সাহস চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।