সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষক স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন এই শিক্ষকরা।
রবিবার (১১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়য়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা ৫০ জন শিক্ষক স্বাগত জানাচ্ছি। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী দিনে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের অঙ্গীকারকেও আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, পূর্ববর্তী সরকারের বিদায়ের পর থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্যত কোনও সরকার না-থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে সংবিধান-স্বীকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের আবাসস্থল ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’ পুড়িয়ে দেওয়া একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, যা আমাদেরকে প্রবলভাবে আহত করেছে।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর, মুজিবনগর জাদুঘর ভাঙচুর, দেশের বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভাঙচুর, বেগম রোকেয়া, জয়নুল আবেদিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ফকির লালন শাহসহ অনেক শিল্পীর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভাঙচুর বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাতের শামিল বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া, বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্থাপনা ও ঘরবাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তাদের শারীরিক নির্যাতনে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, এগুলো কোনও সাময়িক আবেগের কৃতকর্ম নয় বরং সুদূরপ্রসারী অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূল চেতনায় আঘাত করার পরিকল্পনা। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং একটা অশুভ শক্তি এর কালো থাবা বসিয়ে শিক্ষার্থীদের সুন্দর অর্জনকে অসুন্দর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাই। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর মেরামত, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর জানমালের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি করছি।
শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা, সততা এবং শক্তির ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তাই, শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্র সংস্কারের দর্শনের উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এদেশকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের নবযাত্রায় আমাদের আন্তরিক সমর্থন, সক্রিয় সহযোগিতা এবং অন্তহীন শুভকামনা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করছি।