পুলিশের গুলিতে নয়, আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে পড়া দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা গিয়ে থাকতে পারে তার বন্ধু হৃদয়। ফেসবুকে নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিরাজুল ইসলাম নিঝুম। ঘটনার ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি সমীকরণ মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বলে ভিডিওতে জানান।
১৮ জুলাই চট্টগ্রামে আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তারুয়া। তার সঙ্গে থাকা বন্ধু সিরাজুল ইসলাম নিঝুম ফেসবুকে দেওয়া ভিডিও পোস্টে বলেন, ‘হৃদয়কে পুলিশ গুলি করেনি। ভিড়ের মধ্যে কেউ তাকে গুলি করেছিল।’ নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নিঝুম তাকে রিকশায় করে পাশের পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যান। নিঝুম দাবি করেছেন, কোটা সংস্কারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিনি ও হৃদয়সহ কয়েকজন বন্ধু বহদ্দারহাট এলাকায় ১৮ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে যান।
সেদিন শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে। এসময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পেছনে সরে যায়।
‘হৃদয় চট্টগ্রামের স্থানীয় না হওয়ায় এলাকা খুব ভালো করে চেনেন না’ উল্লেখ করে নিঝুম বলেন, ‘বহদ্দারহাট চার রাস্তার মোড়ে পুলিশ ও বিজিবি অবস্থান নিয়েছিল। বাম পাশের রাস্তার একটা অংশ থেকে ঢিল ছুড়ছিল। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ যেখানে আমরা ছিলাম, পুলিশ কিছুক্ষণ পরপর গুলি করছিল। এসময় ভিড়ের মধ্যে অনেকের উপস্থিতি সন্দেহজনক বলে তার আর হৃদয়ের মধ্যে কথা হয় জানিয়ে নিঝুম দাবি করেন, ‘‘আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে ব্যাগ ছিল। আমরা ধাওয়া খেয়ে পিছু হটছিলাম। কিন্তু ওরা (সন্দেহভাজন) ভয় পাচ্ছিল না। তারা ভীষণ ‘অ্যাগ্রেসিভ’। আমার সন্দেহ হয়। এই মানুষগুলোর উপস্থিতি অন্যদেরও পুলিশের ওপর হামলা করতে উসকানি দিচ্ছিল।’’
বন্ধু হৃদয় পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি দাবি করার কারণ হিসেবে সিরাজুল ইসলাম নিঝুম বলেন, ‘পুলিশ মেটাল বুলেট ছোড়েনি, রাবার বুলেট ছুড়ছিল। আর ধাওয়া খেয়ে আমরা তখন দেড় থেকে ২০০ মিটার দূরে চলে যাই। আমাদের ক্রাউডের মাঝখানে হঠাৎ বিকট আওয়াজ হয়। দুই-তিন সেকেন্ড পরে দেখি হৃদয় পড়ে আছে, হাত দিয়ে ডাকছে। আমি তখন তার দিকে তাকাতেও পারছিলাম না। প্রথমবার গুলিবিদ্ধ মানুষ দেখলাম। অনেককে সাহায্যের জন্য ডাকি। পরে অল্প বয়সী কয়েকজন ছেলের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ রিকশায় শেষ সময়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ও বারবার বলছিল—‘পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পা নড়াইতে পারছি না।’ আমি তার পা-টা ধরে ছিলাম।’’ বারবার জিজ্ঞেস করছিল, ‘আর কতক্ষণ’।
নিঝুমের মতে, হৃদয় চন্দ্র তারুয়া এবং পুলিশের মাঝে প্রায় দেড়শ’ লোক ছিল এবং তার মধ্যে পুলিশের ছোড়া বুলেট হৃদয়কে আঘাত করবে— এমন সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি আরও যুক্তি দেন যে তিনি যে গুলির শব্দ শুনেছিলেন, তা বেশ জোরে ছিল এবং অন্তত দেড়শ মিটার দূরে থাকা পুলিশের কাছ থেকে সেটা আসেনি।
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভিডিওতে নিঝুম বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বেশি দিন এ রকম থাকুক, তা আমি চাই না। আমি এখন পরিবার থেকে অনেক দূরে। আমি আমার পরিবারকে খুব মিস করি। তবে রাস্তায় কিছু ঘটতে পারে এই ভয়ে আমি বাড়ি ফিরতেও পারি না। আমি চাই, সাধারণ ছাত্রদের কারসাজি ও ব্যবহার করা লোকদের চিহ্নিত করা হোক।’ তিনি শিক্ষার্থীদের সব মৃত্যুর সঠিক তদন্তের আহ্বান জানান এবং তার সহপাঠীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে কেউ তাদের ব্যবহার করতে না পারে।