রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিতকে (১৮) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চৌধুরী রাজিন ইকবাল (১৮) নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
রবিবার (৭ জুলাই) রাতে হবিগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪ এর একটি আভিধানিক দল। অভিযুক্ত রাজিনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাব-৪ এর একাধিক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সোমবার বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সহপাঠী রাজিন ও তার বাবা ইকবাল হোসাইনকে আসামি করে মিরপুর শাহ আলী থানায় মামলা করেছেন নিহত রাফিতের বাবা আবুল বাশার মিয়া।
এর আগে শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের রাফিতকে কলেজের পাশে একটি কোয়ার্টারের বাসায় ডেকে নিয়ে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে বাসার সামনে ফেলে রাখা হয়। এই ঘটনা জানাজানি হলে আত্মগোপনে চলে যায় অভিযুক্ত রাজিন।
রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জুবায়ের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় নিহত জুবায়েরকে তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাফন করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিহত শিক্ষার্থী জুবায়েরের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি কাটা জখম রয়েছে। এছাড়া ডান চোখের পাশে কাটা, গলায় ৩ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা জখম, বুকের ডানপাশে কাটা জখম আছে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিতে শাহআলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রাথমিক তদন্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জুবায়েরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত শিক্ষার্থী জুবায়েরের মামা মো. নুরুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের কলেজের ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল। গত এক মাস আগে ক্লাসে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদেরই সহপাঠী রাজিনের মারামারি হয়। এতে রাজিনের বিরোধিতা করে জোবায়ের। ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিন ক্লাসের মধ্যে জুবায়েরের উপর হামলা করে। তখন জুবায়ের কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে বিষয়টি জানালে শিক্ষকরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, তখন কলেজের প্রিন্সিপাল রাজিনের বাবা-মাকে ডেকে রাজিনকে সতর্ক করে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই রাজিন ও তার বাবা দুজন মিলে কৌশলে জুবায়েরকে তাদের বাসায় নিয়ে হত্যা করেছে। তবে তাদের গ্রেফতার করা হলে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে। এঘটনায় চৌধুরী রাজিন ইকবাল ও তার বাবা ইকবাল আহমেদ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে শাহ আলী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নুরুজ্জামান।
জানা গেছে, জুবায়েরের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। তার বাবা আবুল বাশার ভূমি অফিসে চাকরি করেন। মা আয়েশা সিদ্দিকা রুমী গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুবায়ের ছিল সবার বড়। তিনি ঢাকায় মিরপুর ১ নম্বর রাইনখোলা এ-ব্লকে মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে ঢাকা কমার্স কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো।
জুবায়েরের মামা নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমার ভাগনে মোবাইল ব্যবহার করতেন না। কোন মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল না। গত শনিবার সকালে কোচিং করতে গিয়ে আর বাসায় না ফেরায় দুপুরের পর থেকে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বিকালে তার কোচিংয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় তার কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে জানায়, আমার ভাগিনাকে কেউ নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
ঢাকা কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল আবু মাসুদ বলেন, শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যার ঘটনা কলেজের বাইরে হয়েছে। এর দায়ভার কলেজ কর্তৃপক্ষ নেবে না। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন।
এ বিষয়ে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, নিহতের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে চলছে। কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত চলছে।