সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা প্রথা বাতিলসহ ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধের পর সে জায়গা ছেড়েছেন তারা। তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে আবারও বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৭ জুন) বেলা আড়াইটা নাগাদ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর হাইকোর্টের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন হয়ে বিকাল পৌনে ৪টায় শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হন তারা।
এ সময় শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। সেখানে দেড় ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর বিকাল সোয়া ৫টার দিকে তারা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। এ সময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা '১৮-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', 'সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে', '১৮-এর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে', 'সংবিধানের মূল কথা সুযোগের সমতা', 'কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক' ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
দলনিরপেক্ষ ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্যসচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে আমাদের আন্দোলন চলমান। আমরা মাঝখানে আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের আবারও রাজপথে নেমে আসতে হয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আগামীকাল হাইকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আমরা আশা করবো, সেই শুনানি শিক্ষার্থীদের পক্ষে হবে। আমরা যে চার দফা দিয়েছি, তার প্রথম দফা যেন আগামীকালের মধ্যেই পূরণ করা হয়। প্রথম দফা শেষে আমাদেন বাকি দফাগুলো যাতে পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হয়।’
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আগামীকাল বেলা ১১টায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবো এবং যতক্ষণ না আমাদের পক্ষে রায় আসছে, আমাদের প্রথম দফা পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো—২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।