তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বিধিবিধান থাকলেও কার্যকর করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেই। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতায় সিগারেট কোম্পানিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিবিধান বাস্তবায়নে সচেতনভাবে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদি ভোক্তা তৈরি করা।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ৪ জন গণমাধ্যমকর্মীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সিগারেট কোম্পানিগুলোর বেপোরোয়া আইন লঙ্ঘন এবং নীতিতে হস্তক্ষেপের ফলে তরুণদের তামাক পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়ার তথ্য উঠে এসেছে। এ সময় তারা তরুণদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে দ্রুত সংশোধন করে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
দৈনিক ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার সেবিকা দেবনাথ বলেন, নিজেদের ব্যবসার প্রসারে তামাক কোম্পানিগুলো সুকৌশলে গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করে ক্যাম্পেইন, গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন, গবেষণা ও রিপোর্ট প্রচারে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তামাকবিরোধী প্রতিবেদন প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
‘ঢাকা পোস্ট’ এর গবেষণা এবং সম্পাদনা বিভাগের প্রধান বিনয় দত্ত বলেন, স্থানীয় সরকার গাইড লাইন অনুসারে নিষিদ্ধ সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট এবং সেখানে মূল ভোক্তা শিক্ষার্থীরা। তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বিধিবিধান থাকলেও কার্যকর করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেই।
দৈনিক সমকালের সাব এডিটর মেহেদী হাসান বলেন, ওটিটি মাধ্যমে প্রচারিত ওয়েব সিরিজগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি তরুণদের ধূমপানে উৎসাহিত করার মতো ডায়ালগ থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
দৈনিক কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার দেলাওয়ার হোসাইন দোলন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে। তরুণদের আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো বিখ্যাত শিল্পীদের এনে কনসার্ট আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানস্থলে তামাক পণ্যের ব্রান্ড কালার এবং লোগোসমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন দিয়ে সাজানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের দফতর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ নাসির উদ্দীন শেখ এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব প্রমুখ।