X
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
১৯ আষাঢ় ১৪৩১

আজিমপুর মাতৃসদনে দুর্নীতি: চিকিৎসকসহ ১৪ জন অভিযুক্ত

জামাল উদ্দিন
০১ জুলাই ২০২৪, ২২:২৬আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ২০:১০

অনুমোদন না নিয়ে এবং অতিরিক্ত দামে ওষুধসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির মচ্ছব চালিয়েছিল আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একে অপরের সহায়তায় প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে মেডিসিন, সার্জিক্যাল আইটেম অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার ক্ষেত্রে বিধিমালা লঙ্ঘন করেন তারা। এতে শুধু তিন অর্থবছরেই হাতিয়ে নেওয়া হয় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি।

এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০১৯ সালে চারটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একটি মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সংস্থাটি। নানা আইনি জটিলতায় বাকি তিন মামলার তদন্ত শেষ করতে দুদকের সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর।

একটি মামলায় মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। কিন্তু বাকি তিন মামলার তদন্ত শেষ করতে আইনি জটিলতায় প্রায় পাঁচ বছর পার হলেও ওই সময়ে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে। 

আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ চারটি মামলা করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। এর মধ্যে একটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। অভিযোগপত্রে তত্ত্বাবধায়কসহ সাত চিকিৎসক, তিন ঠিকাদারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এর দীর্ঘ তিন বছর পর চলতি সপ্তাহে বাকি তিন মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রের দুটিতে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন—মেসার্স মনার্ক এসটাবলিশমেন্টের ফাতে নূর ইসলাম, নাফিসা বিজনেস কর্নারের স্বত্বাধিকারী শেখ ইদ্রিস উদ্দিন চঞ্চল, মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইসরাত জাহান, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস/গাইনি) ডা. রওশন হোসনে জাহান, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ্যান্ড রিচার্স) ডা. মো. লুৎফুল কবীর খান, ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাবেক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রওশন জাহান, মাতৃসদনের মেডিক্যিাল অফিসার (শিশু) ডা. বেগম মাহফুজা দিলারা আকতার, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. মো. আমীর হোচাইন এবং সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা রইছা খাতুন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, তারা একে অপরের সহায়তায় প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে মেডিসিন, সার্জিক্যাল আইটেম অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করেন। তারা এমআরপি ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মূল্যতালিকা মোতাবেক মেডিসিন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশিত মেডিক্যাল অ্যান্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিট (এমএসআর) সামগ্রীর মূল্যতালিকা মোতাবেক সার্জিক্যাল আইটেম অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কেনেননি।

আরও বলা হয়, আসামিরা এসআর বহির্ভূত আইটেম কেনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যমান বাজারদরকে আমলে না নিয়ে গঠিত বাজারদর যাচাই কমিটির প্রণীত মনগড়া ও ভিত্তিহীন দরকে বিবেচনায় নিয়ে এমআরপি ও এসআর (স্ট্যান্ডার্ড রেট) রেটের ঊর্ধ্বে দরপত্র মূল্যায়ন ও অনুমোদনের মাধ্যমে মালামাল কেনেন। এতে এক কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার ৩০৩ টাকা আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধিসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

আরেকটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৬৩০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় এ দুটি মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জেবুন্নেসা হোসেনকে।

অপর অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন—নাফিসা বিজনেস কর্নারের স্বত্বাধিকারী শেখ ইদ্রিস উদ্দিন চঞ্চল, মাতৃসদনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইসরাত জাহান, শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আমীর হোচাইন, সহকারী কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. লুৎফুল কবীর খান, সাবেক সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, মেডিক্যাল অফিসার ডা. বেগম মাহফুজা দিলারা আকতার, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. রওশন হোসনে জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার এবং সাবেক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আলেয়া ফেরদৌসী।

এই অভিযোগপত্রেও মেডিসিন, সার্জিক্যাল আইটেম অ্যান্ড ইকুইপমেন্টস ও প্যাথলজিক্যাল আইটেমগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার ক্ষেত্রে টেন্ডারে অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়। মানা হয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের আইন ও বিধিমালা। এ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা. কাজী গোলাম আহসানে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্র থেকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক ও মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান সরকার গত সপ্তাহে অভিযোগপত্রগুলো আদালতে দাখিল করেছেন। দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

/জেইউ/এনএআর/
সম্পর্কিত
অভিযোগে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন আছাদুজ্জামান মিয়া, কী করবে দুদক?
প্রধানমন্ত্রীর লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে: পঙ্কজ নাথ
সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ব্রাহমা জাতের ৬ গরু জব্দ দুদকের
সর্বশেষ খবর
সমুদ্রসম্পদ আহরণে সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
সমুদ্রসম্পদ আহরণে সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
অভিযোগে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন আছাদুজ্জামান মিয়া, কী করবে দুদক?
অভিযোগে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন আছাদুজ্জামান মিয়া, কী করবে দুদক?
কুড়িগ্রামে হাজারো পরিবার পানিবন্দি, চলছে ত্রাণ বিতরণ
কুড়িগ্রামে হাজারো পরিবার পানিবন্দি, চলছে ত্রাণ বিতরণ
ইউপির সম্পত্তি ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেওয়ায় চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত, শোকজ নোটিশ
ইউপির সম্পত্তি ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেওয়ায় চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত, শোকজ নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
বিচার চলাকালে এজলাসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিচারক
বিচার চলাকালে এজলাসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিচারক
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, এমপির গাড়িও যেতে দেননি শিক্ষার্থীরা
কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, এমপির গাড়িও যেতে দেননি শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানো নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানো নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী