X
বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪
২০ আষাঢ় ১৪৩১

আজ থেকে ওয়াসার পানিতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

আতিক হাসান শুভ
০১ জুলাই ২০২৪, ২০:৩৭আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ২১:২৪

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ সোমবার (১ জুলাই) থেকে বাড়ছে ওয়াসার পানির দাম। এবার ১০ শতাংশ বাড়িয়ে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এক হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, আগে এই দাম ছিল ৪২ টাকা। এ নিয়ে গত ১৬ বছরে ১৬ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা। পরিচালনা ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পানির দাম সমন্বয় করতে হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা ওয়াসা। তবে গ্রাহকরা বলছেন, ওয়াসার উচিত আগে ঢাকা শহরে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। তা না করে প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো বেমানান।

আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি ঢাকা ওয়াসার বোর্ডসভায় অনুমোদন পেতে হয়। পানির দাম এর চেয়ে বেশি বাড়াতে হলে অনুমোদন নিতে হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। কিন্তু এবার তার কোনোটিই হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সাল থেকে টানা তিন বছর ৫ শতাংশ করে পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।

২০২০ সালে সরকারের অনুমোদনের পর আবাসিক গ্রাহকদের জন্য পানির দাম ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ২০২১ সালেও ঢাকা ওয়াসা আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছিল। সবশেষ ২০২২ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম পাঁচ শতাংশ বাড়ায়। কিন্তু তখন ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এরপর পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল। এরপরও গত বছরের ১ আগস্ট ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সে সময় ওয়াটার এটিএম বুথের প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় ১০ পয়সা ভ্যাট।

এদিকে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকদের দাবি, পানির দাম না বাড়িয়ে ওয়াসার উচিত আগে নগরবাসীকে পরিমাণ মতো পানি সরবরাহ করা। তা না করে পানির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঠিকমতো পানির সাপ্লাই পাই না। লাইনে দাঁড়িয়ে পানি আনতে হয়। আর লাইনে যে পানি আসে তাও দুর্গন্ধযুক্ত। রান্নার জন্য নিচে নেমে বালতিতে করে পানি আনতে হয়। ওয়াসার উচিত আগে পুরো ঢাকা শহরে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। তা না করে প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো বেমানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজও রাজধানীর বাসাবো, শেওড়াপাড়া, কাঁঠালবাগান, নন্দীপাড়া, আজিমপুর, মালিবাগ ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় খাওয়ার পানির সংকট আছে। কিছু এলাকায় পানি একেবারে ছিল না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, রাজধানীর কোথাও পানি সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই। তবে কিছু কিছু জায়গায় সাময়িক সমস্যা ছিল। গতানুগতিক কারণ হিসেবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম গভীর নলকূপকে দায়ী করেছে ওয়াসা ।

রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মোসাদ্দেক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই এলাকায় প্রায়ই পানির সমস্যা দেখা দেয়। পানির সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ এলাকার মানুষদের। পানির সংকট দেখা দিলে আমরা অভিযোগ জানাই। তখন ছোট একটা গাড়িতে করে পানি আসে। চলমান এই সংকটের মধ্যে আজকে থেকে আবার দাম বাড়ছে। পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণায় আমরা প্রতিবাদও জানিয়েছি। ওয়াসা সেদিকে কর্ণপাত না করে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী দাম বাড়িয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, দাম বাড়ালেও আমরা যেন অন্তত ঠিকমতো পানি পাই।

সংকটের সমাধান না করে পানির দাম বাড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়ে কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা জীবন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজকেও লাইনে পানি নাই। ওয়াস রুমে ব্যবহার করার মতো পানিটুকুও পর্যন্ত নাই। ছোট ছেলেসহ পাঁচতলা থেকে দুইবার নিচে নেমে পানি নিয়ে আবার উঠছি। মাঝে-মধ্যেই এমন বিপত্তি ঘটে। ওয়াসা তো বলে গরম বাড়লে পানির সংকট দেখা দেয়। তাহলে এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে, এখন কেন সংকট। সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে না, অথচ প্রতিবছর তারা ঠিকই পানির দাম বাড়ায়‌। সরকারের উচিত এদিকে ভালোভাবে নজরদারি করা। দেখা যাবে, বেনজীর-মতিউরের চেয়ে বড় রাঘববোয়াল এখানে বসে জনগণের কষ্টের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে।

পানির মূল্য বৃদ্ধি, সংকট ও সমস্যা নিরসনের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শহীদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আইন অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। আর রাজধানীতে কোথাও পানির সমস্যা নেই। কারণ পানির উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি। বর্তমানে রাজধানীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৬০ কোটি লিটার। আর ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০ কোটি লিটার। কোথাও সমস্যা হলে সংশ্লিষ্টরা ওয়াসার হটলাইন ১৬১৬২ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। তখন ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
পশ্চিমবঙ্গ বিরোধিতা করলেও ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন সম্ভব?
বোতলজাত পানির ‘অযৌক্তিক ও অন্যায্য মূল্যবৃদ্ধি’ বাতিলের দাবি ক্যাবের
সাত নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
সর্বশেষ খবর
পাহাড়ে বেড়েছে বসতি, মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাড়ে ছয় হাজার পরিবারের বাস
পাহাড়ে বেড়েছে বসতি, মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাড়ে ছয় হাজার পরিবারের বাস
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৪ জুলাই, ২০২৪)
রাঙামাটিতে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, আরেকজন নিখোঁজ
রাঙামাটিতে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, আরেকজন নিখোঁজ
জমজমাট লড়াই শেষে তাসকিনদের কলম্বোর হার
জমজমাট লড়াই শেষে তাসকিনদের কলম্বোর হার
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে যে ৭ লক্ষণ প্রকাশ পায়
ভিটামিন ডি কমে গেলে যে ৭ লক্ষণ প্রকাশ পায়
আদালতে সাক্ষীরা জানালেন, তারা কিছু ‘জানেন না’ এবং ‘দেখেননি’
আলোচিত সাব্বির হত্যাকাণ্ডআদালতে সাক্ষীরা জানালেন, তারা কিছু ‘জানেন না’ এবং ‘দেখেননি’
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, এমপির গাড়িও যেতে দেননি শিক্ষার্থীরা
কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, এমপির গাড়িও যেতে দেননি শিক্ষার্থীরা
বিচার চলাকালে এজলাসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিচারক
বিচার চলাকালে এজলাসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিচারক
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানো নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স বাড়ানো নিয়ে যা বললেন মন্ত্রী