শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের ১০০তম জন্মদিন সোমবার (১ জুলাই)। এ উপলক্ষে উত্তরসূরী: নুরজাহান-সারওয়ার মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন একত্রে অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের জন্মশতবর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে এ বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাকে স্মরণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ জাতীয় উদযাপন কমিটি’।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ জাতীয় উদযাপন কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, খান সারওয়ার মুরশিদের ন্যায়বোধের মধ্যে ভাষা ও বুদ্ধির সূত্রে সৌন্দর্য চর্চার স্থান ছিল সুনির্দিষ্ট। ষাটের দশকে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ পালনে রাষ্ট্রীয় বাধার মুখে তিনি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে তিনি সামিল হন এবং জ্ঞানকেন্দ্র ও ক্ষমতাকেন্দ্র আলাদা রাখার নীতির সমর্থনে তার তৎপরতা স্বাধীনতার পরও অব্যাহত থাকে।
তারা বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্দোলনগুলোর ধারাবাহিকতায় সারওয়ার মুরশিদ ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ৯ মাস বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা সেলে সদস্য হিসেবে নিরলস কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন এবং নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি শিল্পী মুর্তজা বশিরকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একটি ম্যুরাল তৈরিতে নিযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে সারওয়ার মুরশিদ পোলেন্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশের চারুকলা অঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান শিল্পীদের পোলেন্ডে বৃত্তির ব্যবস্থাসহ তাদের শিল্পসাধনার দিগন্ত প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
২৪ সদস্য বিশিষ্ট খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ জাতীয় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. ফখরুল আলম, সহ-আহ্বায়ক ড. পারভীন হাসান, সাধারণ সম্পাদক মন্ময় জাফর। উত্তরসূরি: নূরজাহান-সারওয়ার মুরশিদ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উত্তরা অফিস জাতীয় উদযাপন কমিটির সচিবালয় হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়া জাতীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম; সাহিত্যিক, শিল্পসমালোচক ও সাবেক সচিব হাসনাত আব্দুল হাই; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম; সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান; ছায়ানটের নির্বাহী সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী; বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা; রাজাশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম সাত্তার; ড. এস এম ইসলাম; সাবেক সচিব ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ আসফ-উদ-দৌলা; নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন; অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএস’র সাবেক মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সাইদ মুরশিদ; সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ ড. তাজিন মুরশিদ; লন্ডনে সাবেক লেবার পার্টির সদস্য ও কাউন্সিলর কুমার মুরশিদ; গবেষক ও লেখক মোরশেদ শফিউল হাসান; লেখক কাজী সুফিয়া আখতার; লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং ফোকলোর গবেষক ড. আনোয়ারুল করিম; আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হামিদা হোসেন; গবেষক রওশন জাহান; এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি মাফুজা খানম; টিআইবির সাবেক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান; উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মন্ময় জাফর; যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিক্ষক নাভিন মুরশিদ; কণ্ঠশীলনের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গোলাম সারোয়ার।