X
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
১৯ আষাঢ় ১৪৩১

হোলি আর্টিজান হামলা: হাইকোর্টের রায়ের পরও যে ‘অপেক্ষা’ রাষ্ট্রপক্ষের

বাহাউদ্দিন ইমরান
০১ জুলাই ২০২৪, ১৩:০২আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪, ১৩:০২

আট বছর আগে বহুল আলোচিত রাজধানীর হোলি আর্টিজান হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মামলাটির রায়ে এমনই পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে এখানেই শেষ নয়। রায় হলেও কিছু ‘অপেক্ষা’র কথা জানালো রাষ্ট্রপক্ষ।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি।

বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ওই ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত হয়ে শুরু হয় বিচার। মামলার আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। টানা এক বছর মামলার বিচার শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত তার রায়ে ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো— হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‍্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ রায়ের পর নিয়ম অনুসারে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও খালাস চেয়ে করা আসামিদের জেল আপিল শুনানির জন্য মামলার নথিপত্র বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বিচারিক আদালতের এসব নথির মধ্যে মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায়সহ মোট ২ হাজার ৩০৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় জমা করা হয়।

এরপর বিচারিক আদালত থেকে আসা মামলাটির সব নথিপত্র একত্রিত করে আপিল শুনানির জন্য উত্থাপনের জন্য পেপারবুক তৈরি শেষে মামলাটি শুনানিতে ওঠে।

হোলি আর্টিজান বেকারি এখন আবাসিক ভবন (ফাইল ছবি)

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসামিদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ ওরা কতগুলো বিদেশি নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যারা আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল। ধর্মের নামে, উগ্রবাদিতার নামে তাদের হত্যা করেছে। এই দণ্ডিতরাই পেছনে থেকে মদত দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে। তাই আমি মনে করি ওদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।”

২০২৩ সালের শুরুর দিকে হাইকোর্টে মামলাটির ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। যা শেষ হয় একই বছরের ১১ অক্টোবর। পরে ৩০ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে সাত জঙ্গিকে আমৃত্যু কারা দণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

দণ্ডিতরা হলো- জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।

সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়ার ব্যাখ্যায় হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও এই সাত আপিলকারী ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় সহায়তা করেছেন, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্র ও ঘটনায় (জঙ্গি হামলা) সহায়তার কারণে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬ এর ১ উপধারা (ক) (আ) দফায় বর্ণিত অপরাধে তারা দোষী। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট ধারা-উপধারার সঠিক উপলব্ধি না করে আপিলকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। যে কারণে ওই (বিচারিক আদালতের) রায়টি হস্তক্ষেপযোগ্য।’

উচ্চ আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখাটাই আমি মনে করি আসামিদের জন্য যথার্থ ছিল। মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে হাইকোর্ট আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। বের হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগে বিবিধ আবেদন (বিবিধ আপিল) করার প্রয়োজন নেই।

পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারবো কী যুক্তিতে বা কোন কোন যুক্তিতে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও রায়টা (লিখিত অনুলিপি) আমরা পাইনি।’

/এমএস/
সম্পর্কিত
ঘিরে রাখা সেই ভবন থেকে তিনটি বোমা উদ্ধার
মৎস্য খামারের আড়ালে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, নারী সদস্য গ্রেফতার
অভিযান চলছে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা সেই ভবনে
সর্বশেষ খবর
ঢাকায় মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ১৭
ঢাকায় মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ১৭
টেকনাফে পাহাড়ে ঝুঁকিতে অর্ধলাখ মানুষ
টেকনাফে পাহাড়ে ঝুঁকিতে অর্ধলাখ মানুষ
ভয়াবহ বন্যার কবলে আসাম, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮
ভয়াবহ বন্যার কবলে আসাম, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮
বিমানবন্দরে সাড়ে ৪ কোটি টাকার সোনা জব্দ
বিমানবন্দরে সাড়ে ৪ কোটি টাকার সোনা জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
কাঁঠাল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার এই ডেজার্ট
কাঁঠাল দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজাদার এই ডেজার্ট
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
১৪ খেলোয়াড়কে দলভুক্ত করেছে আবাহনী 
১৪ খেলোয়াড়কে দলভুক্ত করেছে আবাহনী 
বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা, ৯ স্থানে পানি বিপদসীমার উপরে
বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা, ৯ স্থানে পানি বিপদসীমার উপরে