X
বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪
১৯ আষাঢ় ১৪৩১

আনার হত্যার মূল কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় ডিবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
২৭ জুন ২০২৪, ১৭:৫৫আপডেট : ২৭ জুন ২০২৪, ১৮:৫১

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কিলিং মিশনে জড়িত সাত জনের সবাইকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে আনার হত্যায় কারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, হত্যার মূল মোটিভ কী, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে এখনও বলতে পারছে না ডিবি পুলিশ। ফলে এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা রয়েছে।

ডিবি পুলিশ বলছে, আনার হত্যায় কারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, তা বের করতে কাজ চলছে। হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য সব কারণ আমলে নিয়ে মোটিভ উদঘাটনে তদন্ত চলছে। 

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, যখনই আমাদের কাছে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা ঘটনার খবর আসে, তখনই আমরা মাস্টারমাইন্ড শিমুল ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করেছি। এরপর তানভীর ও সিলাস্তিকে গ্রেফতার করি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর আমরা নিজেরা কলকাতায় গিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেন পরিদর্শন করি। এই হত্যাকাণ্ডে আরও দুজন জড়িত—ফয়সাল ভুঁইয়া ও মোস্তাফিজুর রহমানের নাম জানতে পারি। তারা আত্মগোপনের জন্য ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ডের মাঝখানে পাতাল কালীমন্দিরে লাল ধূতি পরে অবস্থান করছিল। সেখানে নিজেদের হিন্দু পরিচয় দিয়ে বাঁচার জন্য লুকিয়েছিল।

হারুন অর রশীদ বলেন, এই দুজনকে গ্রেফতারের জন্য আমাদের একটি টিম ছিল ঝিনাইদহে, আরেকটি টিম সুন্দরবনে গিয়েছিল। অন্য দুটি টিম খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ডে কাজ করছিল অনেক দিন ধরে। সবদিকে গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে বুধবার (২৬ জুন) সেই দুজনকে গ্রেফতার করেছি।

ডিবিপ্রধান জানান, ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিল ফয়সাল। সে আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যায়। সেখানে অপেক্ষায় ছিল শিমুল ভূঁইয়া। আর অপর দিকে সঞ্জিভা গার্ডেনের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিল মোস্তাফিজ ও জিহাদ হাওলাদার।

ফয়সাল, শিমুল ভূঁইয়া আনারকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে তাকে রিসিভ করে শিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান। পরে তারা নিচে কর্নারের রুমে যায়। আনার যখন বুঝতে পারেন তিন-চার জনের গতিবিধি, তখন তিনি অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টার সময় ফয়সাল তার নাকে-মুখে ক্লোরোফর্ম ধরে নিস্তেজ করে। এরপর তাকে হত্যা করা হয়।

সংসদ সদস্য আনার কিলিং মিশনে সাত জন অংশ নিয়েছে। তারা সাত জনই গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে শিমুল ভুঁইয়া, ফয়সাল, মোস্তাফিজুর, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার, আমাদের তথ্যের ভিত্তিতে নেপালে আত্মগোপনে থাকা সিয়ামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া তানভীর ও সিলাস্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এর বাইরে আরও দুজন আমাদের কাছে গ্রেফতার রয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু ও গ্যাস বাবু। ঢাকার ডিবির হাতে গ্রেফতার ৫ জনের মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার গ্রেফতারকৃত ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

আখতারুজ্জামান শাহীনের বিষয়ে হারুন বলেন, শাহীন মাস্টারমাইন্ড ছিল ও আছে। তিনি তদন্ত থেকে শেষ হয়ে যায়নি। কিলিং মিশনে সরাসরি জড়িত সাত জনই গ্রেফতার হয়েছে। এর বাইরে মাস্টারমাইন্ড, পরিকল্পনাকারী, মোটিভ, অর্থদাতা এগুলো তো অন্য বিষয়। এখনও আমাদের কাছে শাহীন মাস্টারমাইন্ড। কারণ সে তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া, এসবই তো শাহীন করেছে। শাহীন ১০ মে কলকাতা থেকে দেশে আসে। জিহাদ বাদে হত্যার পর একে একে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সবাই দেশে আসে, কেউ নেপালে চলে যায়। শিমুল ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর শাহীন কিন্তু প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল, তারপর দুবাই হয়ে আমেরিকায় চলে যান। সে ইউএস সিটিজেন। 

সর্বশেষ যে দুজনকে গ্রেফতার করেছেন, হত্যার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি সম্পর্কে কিছু বলেছে কিনা, জানতে চাইলে হারুন বলেন, কলকাতার একটি মার্কেট থেকে হত্যাকারীরা ১৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি চেয়ার কিনে আনে। সঙ্গে আনেন ক্লোরোফর্ম। সেই চেয়ারে বেঁধে আনারকে বিবস্ত্র করা হয়। এই কাজগুলো করেছে ফয়সাল। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সিয়াম এনে দিয়েছিল ফয়সালকে।

মোস্তাফিজ ও ফয়সাল হত্যার কাজ শেষ করে দেশে ফিরে শাহীনকে ফোন করে। বলে আমরা কোথায় থাকবো। শাহীনের একটা বাসা আছে বসুন্ধরায়। সেখানে তারা যায়। সেখানে গিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ছিল ট্রাক ড্রাইভার। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মোবাইল বন্ধ করে তারা চলে যায় খাগড়াছড়ির গহিন অঞ্চলে। সেখানে পাহাড়ের নিচে পাতাল কালীমন্দির আছে। তারা সেখানে নিজেদের নাম বদলে ফেলে। ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে। তারা হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করে। তারা বলে, মাকে তারা খুব ভালোবাসে। তারা চুলের ধরন পরিবর্তন করে এবং ধূতি পরে।

এ অবস্থায় হত্যার মূল মোটিভটা কী- জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান হারুন সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনও হত্যার পেছনে একটা মোটিভ থাকে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার জনপ্রিয় সংসদ সদস্য। তাকে টাকা-পয়সা লেনদেনের কথা বলে কলকাতায় নিয়ে যায় শাহীন। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, কারা লাভবান, কারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান, সেটা আশা করি বের হবে। আনার হত্যার মোটিভ তো অবশ্যই আছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সুনির্দিষ্ট মোটিভ বলতে পারছি না। 

আমরা সব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সম্ভাব্য কারণ আমলে নিয়ে তদন্ত করছি। সর্বশেষ গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেবো। জিজ্ঞাসাবাদ করবো। হত্যার সম্ভাব্য সব মোটিভ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা অনর্থক কাউকে ডাকাডাকি করছি না। নির্দোষ কাউকে হয়রানি করছি না।

 

/এবি/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এমপি আনার হত্যা মামলায় মোস্তাফিজের দোষ স্বীকার
এমপি আনার হত্যা‘পরিচয়-বেশভূষা পাল্টে পাহাড়ে আত্মগোপন করে ফয়সাল-মোস্তাফিজ’
এমপি আজীম হত্যা: গ্রেফতার মোস্তাফিজ ও ফয়সাল ৬ দিনের রিমান্ডে
সর্বশেষ খবর
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলা: সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলা: সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ
নাটোর জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলায় আহত ৭
নাটোর জেলা বিএনপির সমাবেশে হামলায় আহত ৭
চার ক্যাটাগরির পদে ৩৩৮ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে
চার ক্যাটাগরির পদে ৩৩৮ জনকে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ঢাবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
সর্বাধিক পঠিত
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
শান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়: পাপন
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়লো
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
বিসিবির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো
লটকন খাওয়ার এই উপকারিতাগুলো জানতেন?
লটকন খাওয়ার এই উপকারিতাগুলো জানতেন?
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
থানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে গেলো আসামি, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত