“শহিদানদের ঈদ এল বকরীদ!
অন্তরে চির-নওজোয়ান যে, তারই তরে এই ঈদ...
অন্তরে ভোগী, বাইরে যে রোগী, মুসলমান সে নয়,
চোগা চাপকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য যে পরিচয়!
লাখো ‘বকরা’র বদলে সে পার হবে না পুলসেরাত”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই ‘বকরীদ’ প্রতিবছরই ঘুরে ঘুরে আসে আমাদের মাঝে। একসময় ঈদুল আজহা ‘বকরি ঈদ’ নামেও বেশ পরিচিত ছিল, যদিও কালের পরিক্রমায় এই ঈদ এখন আর এই নামে শোনা যায় না। এখন প্রচলিত হয়ে গেছে কোরবানির ঈদ। তারপরও এই কোরবানির ঈদে বকরি বা ছাগলের চাহিদা মোটেই কমেনি।
অনেকেই গরু কোরবানির পাশাপাশি ছাগল কোরবানি দিয়ে থাকেন। অনেকে বড় পশু কোরবানি না দিয়ে শুধু একটা কিংবা একাধিক ছাগল কোরবানি দেন।
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও পথের ধারে ছোট ছোট ছাগলের হাট বসেছে। যেখান থেকে নগরবাসী কোরবানির জন্য চাহিদা অনুযায়ী ছাগল কিনে নিচ্ছেন।
আর কয়েক ঘণ্টা পরই কোরবানির ঈদ। রাত পোহালেই ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তার পছন্দের কেনা ও লালনপালন করা পশু কোরবানি দেবেন। তাই রবিবার (১৬ জুন) বকরি ঈদ বা কোরবানির ঈদের সর্বশেষ কেনাকাটা জমে উঠেছে পাড়া-মহল্লায়।
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সরকারি আইডিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও পাশের গলিতে জমে উঠেছে ছাগলের হাট। গত দুদিনেই এ ছোট অস্থায়ী হাটে বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার ছাগল। এসব হাটে আবার পাড়ার ক্লাব বা সংগঠনের নামে বিক্রীত ছাগলের ওপর ৫ শতাংশ হারে হাসিলও আদায় করা হচ্ছে। যদিও এসব হাটের কোনও অনুমোদন নেই। ক্রেতারাও বিনা বাক্য ব্যয়ে হাসিল দিয়ে তার পছন্দের ছাগল নিয়ে যাচ্ছেন। কারও কোনও অভিযোগ নেই। অনেকেই বলেন, একদিনের ব্যাপার। অভিযোগ করেই বা কী হবে।
এ হাটে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ব্যাপারীরা ছাগল নিয়ে এসেছেন। কেউ এক ডজন, কেউ দুই ডজন। আবার কেউ ট্রাকভর্তি করে কয়েক শত ছাগলও এনেছেন এই হাটে। দিনাজপুরের ব্যাপারী আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুদিন আগে তারা কয়েকজন মিলে ১৬৫টি ছাগল এনেছিলেন। একদিনেই বিক্রি হয়েছে শতাধিক। আর কয়েকটা ছাগল রয়েছে। সেগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
ব্যবসাও ভালো হয়েছে বলে জানান এই ব্যাপারী। বলেন, ছাগলের প্রচুর চাহিদা। দামও ভালো পেয়েছেন। লাভেই বিক্রি করেছেন। ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে তিনি ছাগল বিক্রি করছেন।
মাইনুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা সেখান থেকে ছাগল কিনতে যান ধানমন্ডি থেকে। তিনি বলেন, দাম বেশি দিয়েই ছাগল কিনেছেন। ব্যাপারীরা ছাড়তে চান না। প্রতি ছাগলেই তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দাম নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
বিক্রেতা নূর আলম ১৯টি ছাগল নিয়ে এসেছেন তাজমহল রোডের এই হাটে। তিনি এসেছেন রংপুরের পীরগাছা থেকে। এরইমধ্যে ১৪টা ছাগল বিক্রি করেছেন। তিনিও ছাগল বিক্রি করে খুশি। দাম পেয়েছেন মনের মতো। কোনও লোকসান নেই। গ্রামের গৃহস্থদের কাছ থেকে ছাগল কিনেছেন। কারণ গ্রামের মানুষ বেশি কোরবানি দিতে পারেন না। সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ছাগলের দামও বেশি বলে জানান তিনি। তার মতো আরও অনেকেই ওই এলাকা থেকে ছাগল নিয়ে এসেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
মোহাম্মদপুরের টাউন হলের পাশেই জাকির হোসেন রোডে কয়েক হাজার ছাগল নিয়ে হাট বসেছে। সেখানেও বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। আদাবরের বাসিন্দা ক্রেতা মাহবুব জানান, তিনি ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনেছেন এই বাজার থেকে। এখানেও দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা ছাগল নিয়ে এসেছেন।
মোহাম্মদপুর ছাড়াও লালমাটিয়া, ধানমন্ডি ও পান্থপথের পাড়ার ভেতর ছাগল কেনাবেচার চিত্র দেখা গেছে। তিন-চারটি কিংবা সাত-আটটি ছাগল নিয়ে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে বিক্রি করতে দেখা যায় অনেককে।
জাকির হোসেন রোডের ছাগলের হাটের ব্যবসায়ী রসুল মিয়া বলেন, তিনি এসেছেন রাজবাড়ী থেকে। সেখানে তিনি সারা বছরই ছাগলের ব্যবসা করেন। তবে প্রতি কোরবানির ঈদে তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুরে ট্রাকে করে ছাগল নিয়ে আসেন। এবারও শতাধিক ছাগল নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, বিক্রি ভালো হয়। অন্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি বেশি। ক্রেতারা মনের মতো করে দরদাম করে কিনতে পারেন। তিনিও ১২ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ছাগল বিক্রি করেছেন।
ছবি: প্রতিবেদক