দেশে বইয়ের সবচেয়ে বড় খুচরা বাজার হিসেবে নীলক্ষেত বই মার্কেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের পার্শ্ববর্তী এই মার্কেটটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই পড়ুয়ারা ছুটে আসেন বই কিনতে। দোকানগুলোতে পাওয়া যায় নতুন-পুরাতন সবধরনের বই। আর সেকারণে সব সময়ই ভিড় লেগেই থাকে।
‘নীলক্ষেত মার্কেট’ হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে সবমিলিয়ে মার্কেট আছে মোট ৭টি। সেগুলো হলো শাহজালাল, ইসলামিয়া, বাবুপুরা, বাকুশাহ, গাউসুল আজম, বাণিজ্য বিতান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মার্কেট ও ওয়াসা মার্কেট। প্রায় সবগুলো মার্কেটেই বই বিক্রি, ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি কিছু দোকানে অন্যান্য ব্যবসাও আছে।
২০১৭ সালেও একবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় এই মার্কেটটি। বছর দুয়েক আগে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা আগুন লেগে এই মার্কেটের প্রায় দুই ডজনেরও বেশি দোকান পুড়ে যায়। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ২০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারমধ্যে একটি ছিল প্রতিটি গলিতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখা। মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, এই নির্দেশনা মেনে সেটি করা হয়েছে। তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, আমরা নির্দেশনার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করেছি। তিন মাস পরপর ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে সবকিছু দেখে যাচ্ছে। আমাদের কর্মচারীদেরও আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনায় প্রতিটি গলিতে বের হওয়ার জন্য ‘পথ নির্দেশনা’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেটি দেখা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীলক্ষেত থেকে বের হওয়ার ২৬টি পথ রয়েছে। সেখানে আলাদা করে নির্দেশনা দিতে হবে বলে মনে হয় না।
মার্কেটের নিচে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাংক’ ও ‘ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবস্থা’র নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এই মার্কেটে এগুলো করা অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিছু বাস্তবতার কারণে আসলে এগুলো করা সম্ভব হয়নি।’
মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলছেন, আগের তুলনায় এখন তারা অনেক বেশি সচেতন। কোনও ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক আছেন। ইসলামিয়া মার্কেটের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি ও স্মৃতি প্রকাশনীর মালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আগুন লাগার পর অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর কিছু আসলে বাস্তবতার জন্য করা সম্ভব হচ্ছে না।’
নয়ন বুক শপের কর্মচারী আমির হায়দার বলেন, আমরা নির্দেশনা মেনে সচেতন থাকার চেষ্টা করছি যাতে এই রকম ক্ষতি আর না হয়। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
২০২২ সালে অগ্নিকাণ্ডের বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোকে সহায়তার আশ্বাস দিলেও ব্যবসায়ীরা তা পাননি বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেন কেউ কেউ। শাহজালাল মার্কেটের এক বই বিক্রেতার কাছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো শুধু খোঁজ নিয়ে দেখে যান। যখন আগুন লাগলো, কতজন সহায়তা দিতে চাইলেন। কেউ তো সহায়তা দিলো না।’
রিফাত বুক শপ ও সালমান ল পাবলিকেশন নামে দুটি দোকানের মালিক মো. রফিক শেখ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০২২ সালে আগুন লাগার পর আমাদের অনেক টাকার বই পুড়ে গেছে। তবে এই ক্ষতি পোশাতে বেশ সময় লাগবে। অনেকেই সহায়তা দেবে বলেছিল, কিন্তু কেউ দেয়নি।
ছবি: প্রতিবেদক