দ্রুত ও নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য রাজধানীবাসীর এখন প্রথম ভরসা মেট্রোরেল। ঢাকায় অন্য কোনও যান নেই, যা মেট্রোরেলের মতো নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। তবে সেই স্বস্তির পরিবহনই সোমবার (২৭ মে) ভুগিয়েছে যাত্রীদের।
নিয়মিত মেট্রোরেলে যাতায়াত যখন সবার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই সময় কয়েক দফা দীর্ঘ সময় ধরে এই সেবা বন্ধ থাকা নগরবাসীর জন্য ভোগান্তি বয়ে আনে। আর সেই ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দিনব্যাপী ভারী বৃষ্টি আর মেট্রো লাইনে গাছপালা ভেঙে পড়ায়।
এদিন আনুমানিক সকাল ৭টা ২০ মিনিটে প্রথমবার মেট্রোরেল বন্ধ হয়ে যায়। যা পুরোপুরি ঠিক হতে বেজে যায় সকাল ১০টা।
সকালে মেট্রোরেল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কোম্পানি সচিব (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইলেকট্রিক পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কারিগরি ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সকালে অফিসগামী যাত্রীরা এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। একে তো মেট্রোরেল চলাচলের বিষয়ে কোনও ঘোষণা আসছিল না, অন্যদিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়কে বাস পাওয়াটা যেন দুষ্কর। কিছুক্ষণ যেতেই ঘোষণা আসছিল, ‘ট্রেন চলতে সাময়িক বিলম্ব হবে।’ তবে সেই সাময়িক যেন আর শেষ হয় না।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর স্টেশন থেকে জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলবে না, যাত্রীরা যেন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ততক্ষণে স্টেশনগুলোয় যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। একদিকে অফিসের সময়, আরেক দিকে বৃষ্টি। খুঁজতে হবে বাস। এ যেন অথই জলে সাঁতার কাটার মতো। কেউ কেউ স্টেশন ত্যাগ করেন। অনেকেই অপেক্ষা করতে থাকেন, এই বুঝি সব ঠিক হয়ে ট্রেন চলে আসবে।
অবশেষে ৮টা ৫০ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে তা শুধু মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী এক পাশের লাইনে। সেটাও অল্প কয়েকটি ট্রেনে। অন্যদিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল উদ্দেশে কোনও ট্রেন ছাড়ছিল না। অবশেষে সকাল ১০টার পর প্রায় তিন ঘণ্টা দেরি করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতক্ষণ ধর্যের পরীক্ষা দেওয়া যাত্রীরা শেষে চড়েছিলেন সেই ট্রেনে।
পরে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ধীরগতি ছিল বলে জানান যাত্রীরা। তবু চলুক মেট্রোরেল, এমন প্রত্যাশা সবারই।
তবে প্রত্যাশার ফল দীর্ঘ না হতেই আবারও বিকাল ৫টায় বাধলো বিপত্তি। এবার ডিএমটিসিএলের দাবি, টেকনিক্যাল কোনও সমস্যা নয়। তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনের ভায়াডাক্টের ওপর গাছের ডাল এবং মতিঝিল স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায় সোলার প্যানেল ভেঙে পড়ায় শাহবাগ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ। ট্রেন চলবে শুধু উত্তরা থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত।’
এতে যাত্রীদের একাংশ সুবিধা পেলেও আরেক অংশ বৃষ্টিতে কীভাবে বাড়ি ফিরবেন, সেই দুশ্চিন্তায় পড়েন। পরে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পুরো রুটে অর্থাৎ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানতে চাইলে নিয়মিত যাতায়াত করা মিরপুর ১১-এর বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী এনামুল হাসান বলেন, ‘লেট হয়েছে, তবু মেট্রোরেলে করে অফিস গিয়েছি। কারণ বৃষ্টিতে ভিজে বাসে করে অফিসে রওনা দিয়েও লাভ নেই। এটাও একটা ভোগান্তি। সময়ও লাগতো, মানুষের ভিড় থাকতো। তাই অপেক্ষা করেছিলাম মেট্রোরেলের জন্য। কিন্তু সন্ধ্যায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছি। যখন দ্বিতীয়বারের মতো মেট্রোরেল বন্ধ হয়েছে, তখন রাস্তায় বাস নেই। সকালের চেয়েও সন্ধ্যায় বৃষ্টি ও বাতাস বেশি ছিল।’
সন্ধ্যায় মিরপুর ১০ স্টেশনে যাত্রী ফয়সাল বলেন, সকালে অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাসেই করে কারওয়ান বাজার যাই। বাসও পাওয়া যাচ্ছিল না। ফিরতে সমস্যা হয়নি। তবে একটা বিষয় বুঝেছি। মেট্রোরেলের ওপর মানুষ নির্ভর হচ্ছে। এই সেবা যেন ঠিক রাখা হয়। দুদিন আগেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার সন্ধ্যায় মেট্রোরেল কর্মকর্তাদের ফোন দিলে কাউকে পাওয়া যায়নি।