আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক)। আগামী শনিবার (২৫ মে) সকাল ১১টায় এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (১৯ মে) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণি বিতান’ নির্মাণকাজ উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গৃহীত পোস্তগোলা থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত ‘৮ সারির ইনার সার্কুলার রোড’ এবং ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ‘নজরুল সরোবর’-এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন।
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। পরদিন ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন করার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবাজার মার্কেটে ১৯৯৫ সালে একবার আগুন লাগে। এরপর আবার ২০১৮ সালে আগুন লাগে। তারপর আমরা এখানে সুপরিকল্পিত মার্কেট করার প্রকল্প গ্রহণ করি। তখন বেশ কিছু লোক বাধা দেয়। শুধু বাধা নয়, একটা রিটও করে। পরে হাইকোর্ট এটাকে স্থগিত করে দেয়।’
এদিকে বঙ্গবাজারে আগুনে প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক)-এর তদন্ত কমিটি। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগুনে মোট ৩৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, বঙ্গবাজারে লাগা আগুনে একেবারে পথে বসেছেন তারা। তাদের বেশিরভাগই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। অনেকে বিভিন্ন ধরনের সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলেন। বঙ্গবাজারের এক ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আগুনে সব হারিয়ে এখন তার কাঁধে ঋণের বোঝা। ঋণের বোঝা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা কোনও ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাননি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। এন এম সিল্ক হাউজের মালিক মো. নুরুন্নবী বলেন, আমার তিন দোকানে প্রায় ৪ কোটি টাকার মাল ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমি একেবারে পথের ফকির হয়ে গেছি।
এখন পর্যন্ত কোনও সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবও তিনি বলেন, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সহযোগিতা করার জন্য টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেটাকে আমরা পাইনি। আগুন লাগার পর এমন অবস্থা হয়েছে পরিবার চালানোর মতো অবস্থা আমার ছিল না। তখন যদি অল্প কিছু টাকাও সাহায্য সহযোগিতা পেতাম, বেশ উপকার হতো।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারি সহায়তার বিষয়ে বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যে ৯ কোটি টাকা দিয়েছেন, সেটা শুধু কর্মচারীদের জন্য ছিল, দোকান মালিকের জন্য ছিল না। ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১৫ কোটি টাকা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। এছাড়া সমিতির ফান্ডে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ৭০ হাজার টাকা আছে। এটা আমার হাতে আছে। মোট ২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ২৯৬১ জন ব্যবসার মাঝে বিতরণ করবো। প্রধানমন্ত্রীর টাকাটা আশা করি উদ্বোধনের আগে বা উদ্বোধনের দিন পেয়ে যাবো। পাওয়ার পরে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে বণ্টন করে দেবো।
এদিকে বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন নির্মাণে খুব খুশি ব্যবসায়ীরা। নতুন ভবন নির্মাণ হলে আগুনে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ভালোভাবে ব্যবসা করে পুষিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা করছেন অনেক দোকানদার। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের রাবেয়া গার্মেন্টসের মালিক মো. মানিক খাঁন বলেন, নতুন ভবন হলে ব্যবসাও নতুন করে শুরু করতে হবে। নতুন দোকান পেতে খরচও অনেক বেশি। অন্তত ৩০ লাখ টাকা হাতে রাখতে হবে।