X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস

আন্দোলন-আইনের পরও সড়ক কেন নিরাপদ করা যাচ্ছে না?

মাহফুজ সাদি
২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০

নিরাপদ সড়কের আন্দোলন যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। এরপর তিন দশক (১৯৯৩-২০২৩) পেরিয়ে গেলেও সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও। এর মধ্যেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রবল আন্দোলন হয়েছে, দাবির মুখে আইন সংশোধন করা হয়েছে, ঘটা করে সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে নিরাপদ সড়ক দিবসও পালন করা হচ্ছে প্রতিবছর। কিন্তু এতসবের পরও কেন সড়ক নিরাপদ করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে বারবার সামনে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৩ সালে নিরাপদ সড়কের দাবি সামনে এসেছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে নিরাপদ সড়কের দাবির পক্ষে জনমত গড়ে উঠতে থাকে। ২০১৭ সালে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে এক সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী প্রবল আন্দোলন হয়। সে বছরই সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করা হয়। আইনটি ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর গেজেট আকারে প্রকাশের পর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। এতসবের পরও সড়ক দুর্ঘটনা, হতাহতের পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি।

কেন এমনটি হচ্ছে, জানতে চাইলে তাদের ভাষ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নিরাপদ সড়কের তৎপরতা বৃদ্ধি ও বিস্তৃত হলেও সড়কে, পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। সড়ক ও পরিবহনের সংখ্যা বাড়লেও মালিক-শ্রমিকদের বেশি লাভের মানসিকতা আর সরকারি সংস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। এ থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দায়িত্বশীল হওয়া এবং সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। এসব বিষয়ের সমন্বিত উন্নয়ন ঘটলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। সমস্যাগুলো স্বীকার করে তা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কোনও বিকল্প নেই।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ

প্রতিবছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর সপ্তমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত করতে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সকলের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে সড়কে মোটরযানের সংখ্যা ও সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়, অনেক পরিবার চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধকল্পে সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-নিষেধ জানা ও সেগুলো মেনে চলার বিকল্প নেই। 

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ তথা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, পথচারী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। নিরাপদ সড়কের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে পারব, ইনশাল্লাহ। 

ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে ওই বছর থেকে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে সরকারি উদ্যোগে পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছর সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি নিসচাসহ বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি পালন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে— সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা, র‌্যালি, নিরাপদ নামে স্মরণিকা, পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশ এবং বিতরণ।

গত ১০ বছরে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলেও কমানো যায়নি দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। বরং উল্টো লাফিয়ে লাফিয়ে এই সংখ্যা বেড়েছে। আন্দোলনের ফলে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।  সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনা না গেলে, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দুর্ঘটনা, হতাহতের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে না। সরকারের উন্নয়নের পরও সবকিছু ফিকে মনে হবে। এ জন্য সরকারকেই আরও অনেক কার্যকর ও বাস্তবিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

বেপরোয়া গতিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

গত দুই দশকে দেশের সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে গত ১০ বছরে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে বলে সরকারি হিসাবে দেখা যায়। তবে বেসরকারি সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ৮০ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। এ ক্ষেত্রে একটি গাড়িকে আরেকটি গাড়ি ওভারটেক করার প্রতিযোগিতা এবং ফাঁকা সড়কে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর অসুস্থ প্রবণতা বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনসহ অন্য সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পুরোপুরি এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আইনটি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছি। সড়ক দুর্ঘটনারোধে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং ‘সড়ক নিরাপত্তা’ নামে সময়োপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

নিসচার পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপদ সড়ক দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে ২০০৪ সালের ৭ এপ্রিল একটি সভার আয়োজন করে জাতিসংঘ। সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনতে ২০১০-২০ সালকে ‘সড়ক নিরাপত্তা দশক’ ঘোষণা করে সংস্থাটি। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ২০৩০ পর্যন্ত বাড়ানো হয় সময়সীমা।

নিরাপদ সড়ক চাই’র মহাসচিব লিটন এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের কারণে এখন বিষয়টি নিয়ে কমবেশি সবাই সচেতন হয়েছে। কিন্তু সড়ক ও পরিবহনের অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপদ সড়কের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে আরও তিনটি সংগঠন। এরমধ্যে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, ২০০৭ সালে সেভ দ্য রোড এবং ২০১৭ সালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। নিরাপদ সড়ক চাই ২০১২ সাল থেকে, যাত্রী কল্যাণ সমিতি ২০১৫ সাল থেকে, সেভ দ্য রোড ২০১৪ সাল থেকে এবং রোড সেফটি ২০১৯ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। মাস ও বছরভিত্তিক প্রতিবেদনের পাশাপাশি বর্তমানে ঈদযাত্রার সময়েও আলাদা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে সংগঠনগুলো।

এসব প্রতিবেদনে কোন যানবাহনে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটছে, কেন দুর্ঘটনা ঘটছে, কোন ধরনের মানুষ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এসব-সহ দুর্ঘটনা কমাতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরছে তারা। সংগঠনগুলো সড়কের পাশাপাশি রেল, নৌ ও আকাশ পথে দুর্ঘটনা নিয়েও কাজ করছে।

সড়ক পরিবহন আইনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রাখা হয়েছে। তবে এসব ধারার মধ্যে অধিকাংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা। মূলত মালিক শ্রমিকদের আপত্তির কারণেই গেজেট প্রকাশে দেরি হয়। সংশোধিত এই আইন ফের সংশোধনের দাবি ওঠে বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও। এরমধ্যেই ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরে মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে সংশোধন আনা হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী। কিন্তু বেশ কিছু কারণে এটি অসামঞ্জস্যতা দূর করতে পারেনি। একপেশে আইনে পরিণত হয়েছে। সে কারণে নতুন আইনের পরও সড়কে, পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। খুব বেশি উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির, প্রত্যাশার জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। আইনটি মালিক ও শ্রমিকবান্ধব হয়েছে, যাত্রীবান্ধব হয়নি। পরিচালন পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকায় শৃঙ্খলা আসছে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জনস্বার্থ, পরিবহনের শৃঙ্খলা আনতে কমিটিতে, এমনকি বৈঠকেও ডাকা হয় না সংগঠনগুলোর নেতৃত্বকে।

শনিবার (২১ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক পরিবহনে বিশৃঙ্খলার পেছনে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী রয়েছে, যারা নানা অজুহাতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। এই খাতে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরাট সুযোগ থাকায় গোষ্ঠীটি হীনস্বার্থে সড়ক পরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখছে। সমস্যাটি রাজনৈতিক হওয়ায় যখন যে দল ক্ষমতাসীন থাকে, তখন সেই দলের লোকজন সড়ক পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আশাব্যঞ্জক না। আমরা জনগণকে সচেতন করার, প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছি। আরও গঠনমূলক কাজ করতে হবে। মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সচেতন হতে হবে। বিআরটিএকেও তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে।

নিরাপদ সড়ক দিবস পালনে জনসাধারণকে সচেতন করার কর্মসূচি নিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ’র কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- নিরাপদ সড়ক দিবসে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাজসজ্জা, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়কে নিরাপত্তা বিষয়ক পোস্টার, ব্যানার, স্টিকার প্রদর্শনসহ লিফলেট বিতরণ, রোড শো, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনার আয়োজন। এছাড়া নিরাপদ দিবসের প্রতিপাদ্য দিয়ে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি পালন ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বলেন, আমাদের পুরো সিস্টেমে সমস্যা আছে। সেফটির বিষয়টি, রাস্তার পাশের সাইন-সিগনালগুলো সঠিকভাবে হওয়া, যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ করা, ব্যবহারযোগ্য রাখা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রে। হাইওয়ে পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ সেফটি রিলেটেড কাজটা ঠিকভাবে করছে না। উন্মুক্তভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চললেও তারা অনিয়মগুলো সেভাবে খেয়াল করছে না। লাইসেন্স দেওয়া, ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সেভাবে হচ্ছে না, গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করতে হবে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ কাঠামোর জায়গাটাও শক্তিশালী করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

ক্ষতিপূরণের দাবি সামনে আসছে

প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের চিত্র তুলে ধরে নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং আহতকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শনিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির অন্যান্য দাবি হলো— সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জানাতে এই তহবিলে আবেদনের বিষয়ে থানা, হাসপাতাল ও বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা; গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুর্ঘটনায় মামলার ক্ষেত্রে স্পটে তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া; সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির আবেদন জমাদানের সময়সীমা দুর্ঘটনার তারিখ থেকে ১ মাসের পরিবর্তে নূন্যতম ১ বছর করা; তহবিলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, মালিক শ্রমিক সংগঠনের প্রভাবমুক্ত রাখার উদ্যোগ নেওয়া; সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা তহবিলে বাস মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং সিসি ক্যামেরা পদ্ধতিতে ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করা। চালক ও মালিকের ব্যাংক হিসাব থেকে অটো জরিমানা আদায়ের পদ্ধতি চালু করা।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ 
‘প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো হলেও বাস্তবে প্রতিফলন ঘটেনি’
রাঙামাটিতে সিএনজি-পিকআপ সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
সর্বশেষ খবর
বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ 
বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ 
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যে উদ্বেগ: মোস্তাফিজুর রহমান
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যে উদ্বেগ: মোস্তাফিজুর রহমান
হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার
হাইব্রিড গাড়ির সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারাসহ হাজারো মানুষ
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারাসহ হাজারো মানুষ
সর্বাধিক পঠিত
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা