বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রতি বছরই নানা আয়োজনে দেশের পূজামণ্ডপগুলোয় দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি হয়। তবে এবারের দুর্গোৎসবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যতিক্রমী ধারণা তুলে ধরা হয়েছে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) ভেতরের পূজামণ্ডপে।
প্রকৃতি ও আধুনিকতার অভিনব মিশেলে সাজানো হচ্ছে এই মন্দির। প্রতিমা তৈরিতেও চমক আনা হয়েছে। এবার কেআইবির মণ্ডপে অনুসারীরা দেখতে পাবেন রোবটিক প্রতিমা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, লাভ ফর নেচার’ স্লোগানকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে এই মন্দির ও প্রতিমা।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) গ্রামীণ পরিবেশের আদলে তৈরি কেআইবির পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায় কাজ প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরি করে তার সাজসজ্জার কাজও প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ। পুরো মন্দির তৈরিতে পরিবেশবান্ধব বাঁশ, পাটি ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া মন্দিরের বাইরের অংশ সাজানো হচ্ছে একাধিক রঙিন এলইডি লাইটে। আর মহিষাসুর বধের সচল চিত্র তুলে ধরা হবে এই মন্দিরে। পুরো আয়োজনটি হচ্ছে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের তত্ত্বাবধানে।
গত শনিবার (১৪ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এই উৎসব। ইতোমধ্যে মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এই মন্দির কর্তৃপক্ষও।
রোবটিক দুর্গা প্রতিমার বিষয়ে জানতে চাইলে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবার আমাদের দুর্গাপূজার স্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, লাভ ফর নেচার’। তাই এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা মা দুর্গাকে রবোটিক দুর্গারূপে সাজিয়েছি। দেবী দুর্গার যে কর্মকাণ্ড ও পৌরাণিক ঘটনাসমূহ তা রোবটিকভাবে প্রকাশ পাবে। যেমন, মা দুর্গা যখন ত্রিশূল দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করবেন, তখন মহিষাসুর তীব্র যন্ত্রণায় মা দুর্গার কাছে দুই হাত তুলে ক্ষমা চাইবে। তখন মা দুর্গা তার মুখ দিয়ে বলবেন– ‘যুগে যুগে আসুরিক শক্তি দমনে আমার এই জগতে আগমন।’ সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকবে।
পূজা শুরুর ছয় মাস আগে থেকেই এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংঘের একটি প্রযুক্তিগত টিম আছে। আমাদের এই টিম বরাবরই নতুন নতুন প্রযুক্তিতে মন্দিরকে কীভাবে আরও ব্যতিক্রমভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা নিয়ে কাজ করে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ, লাভ ফর নেচার’ থিমের বিষয়ে সমীর চন্দ বলেন, আমাদের দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা সবাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। তার জন্যই এবারের পূজায় প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি। এছাড়া আমাদের দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা বাড়াতে পুরো মন্দিরটি তৈরিতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করেছি।
নিরাপত্তায় ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (কেআইবি) ভেতরের পূজা মন্দিরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের আগমনের প্রত্যাশা করছে পূজা কমিটি। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সমীর চন্দ বলেন, আমাদের পূজামণ্ডপে ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, যা দিয়ে সার্বক্ষণিক সব কিছু খেয়াল রাখা হবে। এছাড়া আড়াই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক থাকবে আমাদের, যারা ওয়াকিটকি নিয়ে নিরাপত্তা দেবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছি।
আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা শুরু হবে। আর ২৪ অক্টোবর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এই উৎসব।
ছবি: জুবায়ের আহমেদ