রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটটি এখন পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ। এরইমাঝে বসে আবারও ব্যবসা দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে কবে নাগাদ তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন, সে তথ্য জানা নেই কারও। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সহযোগিতা চাচ্ছেন সবার। যার যে দোকান ছিল তিনি সেই দোকানেই বসতে পারবেন বলে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। এ নিয়ে কোনও লুকোচুরি হতে দেওয়া হবে না বলেও তারা নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট নামে পরিচিত কাঁচা বাজারে আগুন লাগে। হক স্টোর নামের একটি বেকারি থেকে আগুনের সুত্রপাত বলে জানান মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরীরা। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ১৭টি ইউনিট পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পুরোপুরি আগুন নেভাতে পারেনি সারা দিনেও। প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর মার্কেটের আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই ব্যবসায়ীরা যার যার দোকান পরিষ্কার করতে শুরু করেন।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ‘মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা বাজার মার্কেট’ তিনটি শেডে ভাগ করা। প্রতিটা শেডে দুটি সারিতে চার লাইনে দোকান। মার্কেটের উত্তর পাশে মাছ–মুরগিসহ মাংস বিক্রির শেড। এই শেডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মাঝের শেডের হক স্টোর থেকে আগুন লাগে। ওই শেডের মুখে কয়েকটি জুয়েলারি দোকানও ছিল। একই শেডের উত্তর পাশে জুতা, মুদি ও মসলাপাতির দোকান। পশ্চিম পাশের শেডের দোকানগুলো কাপড়ের। এছাড়া দক্ষিণ পাশে শুধু সোনা ও কাপড়ের দোকান। কাপড় ও সোনার শেডের প্রতিটি দোকানের ওপরে ওই দোকানের গোডাউন ছিল। নিচে বসার চৌকির নিচেও ব্যবসায়ীরা মালামাল রাখতেন। সিলিং পর্যন্ত প্রতিটি দোকানে দেয়াল দেওয়া। কিন্তু সিলিংয়ের ওপরে তৈরি গোডাউনগুলোতে লোহার গ্রিল লাগানো। এতে করে খুব সহজে আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ফয়সাল স্টোরের মালিক ফয়সাল আলী বলেন, মুদিসহ বিভিন্ন পণ্যের চারটি দোকান ছিল তাদের। সবগুলো দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে তাদের অন্তত দেড়কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাবিব ক্লাথ স্টোরের কর্মচারী রুবেল মিয়া বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর এই দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মার্কেটের মধ্যে অপরিচিত যাকেই দেখছেন, তার কাছে জড়ো হয়ে কর্মচারী ও মালিকরা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন। অনেকে আবার এগিয়ে এসে বলছেন ‘ভাই আমার নামটা একটু লিখেন।’ যাতে তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ না পড়ে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে দেখা যায়– ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা নিজেরাই শ্রমিকদের নিয়ে পুড়ে যাওয়া দোকান পরিষ্কার করে ময়লা বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। পরে সেটা সিটি কপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার আগুন নেভানোর ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরাই দোকান পরিষ্কার করতে নেমে পড়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক দোকানের দেয়াল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কোনও কোনও দোকানের দেয়াল ভেঙে পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা চান না। তারা চান যত দ্রুত তারা ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সেজন্য সহায়তা করতে। সিটি করপোরেশন থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠিক করে দিলে, তারা আবারও বসতে পারবেন। শুধু ওপরের ছাউনি, ক্ষতিগ্রস্ত দেয়ালসহ অবকাঠামো ঠিক করে দিলেই তারা বসতে পারবেন জানান পুড়ে যাওয়া দোকানের মালিকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষি মার্কেটের একটি শেডে ১১২টি দোকান, মাঝের খানের শেডে ১৩২টি দোকান ও কাঁচাবাজারের শেডে ৭৪টি দোকান রয়েছে। এছাড়া ভাড়ায় চালিত টোল দোকান আছে আরও ১২৯টি। নাম প্রকাশ না করে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন দোকানি অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী একটি মহল অনেককে এ সুযোগে উচ্ছেদ করে নতুন লোক বসানোর পাঁয়তারা করছে।
কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মার্কেটটি কখনও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন থেকে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা ভুল। এছাড়া এই মার্কেট তো কখনও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়নি। মার্কেটের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যার যেই দোকান, তিনি সেটাতেই বসবেন। শিগগিরই মেরামতের জন্য কাজ শুরু করা হবে।’ তবে কবে নাগাদ তারা বসতে পারবেন, সেটা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
ছবি: জামাল উদ্দিন