X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

কী সাজা হতে পারে তারেক-জোবাইদার?

মহিউদ্দিন খান রিফাত
০১ আগস্ট ২০২৩, ২২:০০আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ২২:০০

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে। মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক জহিরুল হুদা। তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। বিচার প্রক্রিয়া শেষে প্রায় ১৬ বছর পর এই মামলা রায় ঘোষণা করবেন আদালত।

গত ২৭ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে তারেক-জোবাইদার মামলার রায় ঘোষণার জন্য বুধবার (২ আগস্ট) দিন ধার্য করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। এ মামলায় ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ের মধ্যে ৪২ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

উল্লেখ্য, এই মামলায় আসামি করা হয়েছিল তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকেও। এরপর ২০০৮ সালে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। পরে ইকবাল মান্দ বানুর মৃত্যু হলে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পর তাদের পলাতক দেখানো হয়। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আইন অনুযায়ী এই মামলায় তারেক-জোবাইদার কী সাজা হতে পারে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুদক আইনের ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন কোনও তথ্যের ভিত্তিতে এবং এই তথ্য বিবেচনায় প্রয়োজনীয় [অনুসন্ধান] পরিচালনার পর যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে কোনও ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তি বৈধ উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, তাহলে কমিশন লিখিত আদেশে ওই ব্যক্তিকে কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে দায়-দায়িত্বের বিবরণ দাখিলসহ নির্ধারিত অন্য যেকোনও তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবে। (২) যদি কোনও ব্যক্তি- (ক) উপ-ধারা (১)-এ উল্লিখিত আদেশ পাওয়ার পর সে অনুযায়ী লিখিত বিবৃতি বা তথ্য দিতে ব্যর্থ হন বা এমন কোনও লিখিত বিবৃতি বা তথ্য দেন, যা ভিত্তিহীন বা মিথ্যা বলে মনে করার যথার্থ কারণ থাকে, অথবা (খ) কোনও বই, হিসাব, রেকর্ড, ঘোষণাপত্র, রিটার্ন বা উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোনও দলিলপত্র দাখিল করেন বা এমন কোনও বিবৃতি দেন, যা ভিত্তিহীন বা মিথ্যা বলে মনে করার যথার্থ কারণ থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি তার নিজ নামে বা তার পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তির নামে এমন কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রয়েছেন বা মালিকানা অর্জন করেছেন, যা অসাধু উপায়ে অর্জিত হয়েছে এবং তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং তিনি ওই সম্পত্তি দখল সম্পর্কে আদালতের কাছে বিচারে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে ওই ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বছর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত যেকোনও মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। একইভাবে অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন এবং তার ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্তযোগ্য হবে৷

(২) উপ-ধারা (১)-এ উল্লিখিত কোনও অপরাধের বিচার চলাকালে যদি প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজ নামে বা তার পক্ষে অপর কোনও ব্যক্তির নামে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেছেন বা অনুরূপ সম্পত্তির দখলে রয়েছেন, তাহলে আদালত অনুমান করবে (shall presume) যে অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই অপরাধে দোষী। যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে ওই অনুমান খণ্ডন (rebut) করতে না পারেন এবং কেবল ওই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া কোনও দণ্ড অবৈধ হবে না।

এ মামলায় দুদক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ডের প্রত্যাশা করেছে। সব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। আমরা সব সাক্ষ্য-প্রমাণে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা যুক্তি উপস্থাপন শেষে তাদের দুই আইনেই সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয়ে বিএনপির আইন বিষয় সহ-সম্পাদক ও তারেক-জোবাইদার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তা রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য। তারেক রহমানের এর আগে চার মামলায় কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই কারাদণ্ডগুলোও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এটি প্রথম ও একমাত্র মামলা। তাকেও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে পৃথক চার মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তবে জোবাইদার এটি প্রথম ও একমাত্র মামলার রায় বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

মুদ্রা পাচারের মামলায় ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে প্রথমে খালাস দিয়েছিলেন ঢাকার আদালত। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর হাইকোর্ট তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানকেও কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড, তারেকের হয় ১০ বছর সাজা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে তিনবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। তবে সব সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় তারেককে যাবজ্জীবন সাজা খাটার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- 

পলাতক তারেক-জোবাইদা আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন?

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আদালত থেকে হাতকড়াসহ পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় শাহে আলম মুরাদসহ ২ জন রিমান্ডে
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক ইউক্রেনের হামলায় নিহত
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক ইউক্রেনের হামলায় নিহত
ইচ্ছেমতো বসছে দোকান, পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য ম্লান
ইচ্ছেমতো বসছে দোকান, পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্য ম্লান
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৫)
খামারে আগুন, পুড়ে মারা গেছে ৫০ হাজার মুরগি
খামারে আগুন, পুড়ে মারা গেছে ৫০ হাজার মুরগি
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
রাজধানীতে আবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
রাজধানীতে আবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা