X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

নিউমার্কেটে আগুন: ঈদ নিয়ে উৎকণ্ঠায় কয়েক হাজার পরিবার

সাদ্দিফ অভি
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০০আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০০

‘চাঁদরাতে (ঈদের আগের রাত) ভোরবেলা পর্যন্ত ডিউটি করতাম। এরপর বেতন-বোনাস নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাইতাম। এবার মনে হয় কিছুই হবে না। সব পুড়ে শেষ! উপরওয়ালার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নাই।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নিউ সুপার মার্কেটে একটি দোকানের কর্মচারী রমিজ। তার মতো কয়েক হাজার কর্মী ও ব্যবসায়ীর এখন দিন কাটছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায়।

শনিবার (১৬ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেট ভবনে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ৫টা ৪৩ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ওইদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন পুরোপুরি নির্বাপিত হয় আজ রবিবার সকাল ৯টার দিকে।

নিউ সুপার মার্কেটে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

আগুনে নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয়তলার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবসায়ীদের মতে, তিনভাবে মার্কেটের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমত আগুনে, দ্বিতীয়ত আগুন নেভানোর পানিতে এবং তৃতীয়ত আগুনের তাপে গলে পড়া ফলস সিলিংয়ে।

তৃতীয় তলার সব দোকানের মালামাল পুড়ে ছাই। ওই ফ্লোরের কোনও ব্যবসায়ীই তাদের কিছুই রক্ষা করতে পারেনি। তবে দ্বিতীয় তলার কিছু মালামালা সরাতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সংখ্যায় তা সামান্য বলে দাবি করেন তারা।

রবিবার (১৬ এপ্রিল) মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা যায়, দোকানিরা দোকান পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া আর ভেজা মালামালের ওপর বসে আফসোস করছেন। পানিতে নষ্ট ভেজা কাপড় এবং পুড়ে যাওয়া কাপড় মার্কেটের বাইরে স্তূপ করছেন তারা।

নিউ সুপার মার্কেটের সামনে পোড়া কাপড়ের স্তূপ

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এক একটি দোকানের সঙ্গে অন্তত তিন থেকে চার জন করে কর্মচারী জড়িত। প্রত্যেকের সংসার চলে তার আয়ে। সেই হিসাবে অন্তত সাড়ে ৪ হাজার পরিবার এখন শঙ্কায়—ঈদ কীভাবে করবেন, তা নিয়ে।

নিউ সুপার মার্কেটের প্রিয়া ফ্যাশনের সত্ত্বাধিকারী শাহাদাৎ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার দুই জন কর্মচারী আছে, দোকান একটাই। আর তো কোনও ব্যবসা নাই। কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দিবো, এখনও জানি না। ঈদের আগে যদি কয়েক দিন ব্যবসা করার সুযোগ পাই তাহলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা উতরানো যাবে।’

ঈদের সময় প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ টাকার বিক্রি হয় এসব দোকানে। এসব দোকানে সব ধরনের কাপড় বিক্রি হয়। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত বিক্রি চলে। সকালে বিক্রি শেষ করে দোকান বন্ধ করে সবাই বাড়ি চলে যান পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে। তবে এবার তা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের তৃতীয় তলার একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘৩ লাখ টাকার কাপড় তোলা ছিল দোকানে। সব শেষ। পুড়ে ছাই, কিচ্ছু নাই।’

নিউ মার্কেটে দুটি দোকানের মালিক সাব্বির বলেন, ‘আমার ৬ জনের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই দোকান। পুড়ে গেছে সব। কিচ্ছু নাই আর আমার।’

‘ইসলাম গার্মেন্টস’ নামে একটি দোকানের বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘অল্প কিছু মাল বাঁচাইতে পারছি, বাকি সব পুড়ে গেছে। আগুনের তাপে একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে গেছে কাপড়। দোকানে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকার মাল ছিল। আজকে দোকান পরিষ্কার করছি, দেখা যাক ঈদের আগে খোলা যায় কিনা। ঈদের আগে দোকান খুলতে না পারলে রাস্তায় বসা ছাড়া উপায় থাকবে না। বিক্রির টাকা থেকে দোকান ভাড়া, নিজেদের বেতন, বোনাস সব। এই টাকায় তো আমরা চলি, আমাদের রিজিক এটাই।’

নিউ মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী । ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

দোকানের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান বলেন, ‘গড়ে একটা দোকানের ওপর এখানে তিনটি পরিবার নির্ভরশীল। তিনটি পরিবারই এই এক দোকানের আয়ের ওপর নির্ভর করে। সারা বছরের ব্যবসা কিন্তু এই সময়েই হয়, শেষের ১০ থেকে ১৫ দিনে। বাকি সময় কিন্তু কোনোরকমে চলে। এই সময়ের ওপর নির্ভর করে আমরা প্ল্যান করি ব্যবসার। এই সময়টায় এসে আমরা এমন একটা বড় সমস্যার মধ্যে পড়লাম। এতে করে বিগত এক বছরের সমস্যা আমাদের সঙ্গে রয়ে গেলো। শুধু তাই নয়, আগামী এক বছর কীভাবে ব্যবসা করবো সেটাও অনেক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

নিউ সুপার মার্কেটে সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীনকে আহ্বায়ক এবং প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘রোজার শেষ ১০ দিনে সবচেয়ে ভালো বেচাকেনা হয়ে থাকে। অন্য সময় কোনও ব্যবসায়ীর কাছে যদি এক টাকা থাকে, এই সময় এসেই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা লোন করে থাকেন। তারা রোজার ঈদকে টার্গেট করে ব্যবসা করে থাকেন।’

নিউ সুপার মার্কেটে  ক্ষতিগ্রস্ত দোকান

তিনি বলেন, ‘অন্য সময়ে কোনও ব্যবসায়ীর যদি দিনে দুই থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়, এই সময়ে বেচাকেনা হয় কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত। আর ব্যবসায়ীরা এই সময়ে খুব কমই টাকা বাসায় নিয়ে থাকেন। কারণ, দোকান বন্ধ করতে করতে রাত ১২টা-১টা বেজে যায়। ওই সময় কেউ ঝুঁকি নিয়ে সারা দিনের বেচাকেনা লাখ টাকা বাসায় নিয়ে যেতে চান না। ফলে আমরা ধারণা করছি টাকা ভেতরে অর্থাৎ দোকানের ক্যাশবক্সে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ ক্ষতি হলো এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ঈদের আগে কোনও ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। শুক্রবার রাতে যে হাসিমুখে বাড়ি গেছে, শনিবার সকালে এসে ফুটপাতে বসে কাঁদছে। ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই খারাপ।’

/ইউএস/এমওএফ/
টাইমলাইন: নিউ সুপার মার্কেটে আগুন
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:০০
নিউমার্কেটে আগুন: ঈদ নিয়ে উৎকণ্ঠায় কয়েক হাজার পরিবার
১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪২
১৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৭
সম্পর্কিত
হাতিরপুলে র‌্যাব পরিচয়ে ডাকাতি: গ্রেফতার ৮
নিউমার্কেটে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০, বিএনপি নেতা আটক
আন্দোলনের প্রভাব নিউমার্কেটে, অলস সময় যাচ্ছে বিক্রেতাদের
সর্বশেষ খবর
ইরেশ যাকের ‘খুনি’: ফুঁসে উঠলো ফেসবুক!
ইরেশ যাকের ‘খুনি’: ফুঁসে উঠলো ফেসবুক!
বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও খরচ কমানোই প্রধান লক্ষ্য: আইন উপদেষ্টা
বিচারকাজে বিড়ম্বনা, সময় ও খরচ কমানোই প্রধান লক্ষ্য: আইন উপদেষ্টা
প্রেমিকাকে দল বেঁধে ধর্ষণ: প্রেমিকসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন
প্রেমিকাকে দল বেঁধে ধর্ষণ: প্রেমিকসহ পাঁচজনের যাবজ্জীবন
অবশেষে ভারতে সাফের জন্য ক্যাম্পই বন্ধ হয়ে গেলো
অবশেষে ভারতে সাফের জন্য ক্যাম্পই বন্ধ হয়ে গেলো
সর্বাধিক পঠিত
রিজার্ভ আরও বাড়লো
রিজার্ভ আরও বাড়লো
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ