X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘মগবাজারের বিস্ফোরণের পুনরাবৃত্তি সিদ্দিকবাজারে’

আব্দুল হামিদ
০৮ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৬আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩, ১৮:০২

তিতাস গ্যাসের লিকেজ থেকে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে নর্থ রোডের পৌর ভবন বেসমেন্ট থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। এখনও তিতাস গ্যাসের লাইন থেকে বুদবুদ করে গ্যাস বের হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীর মগবাজারে গ্যাস লিকেজের বিস্ফোরণ সিদ্দিকবাজারে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।’

বুধবার (৮ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উদ্ধার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরিত ভবনের শুধু উত্তর পাশের রাস্তার ধারের কক্ষটি বিস্ফোরিত হয়। সেখানে দেখা গেছে, বেসমেন্ট থেকে বিস্ফোরণের আঘাতটি ওপরের দিকে উঠেছে। এ জন্য বেসমেন্ট ও একতলার ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দোতলার ছাদ গম্বুজ টাইপের হয়ে ওপরের দিকে উঠেছে। এতে ভবনের উত্তর পাশের বেসমেন্টের কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে মাস্টার ম্যানেজমেন্টে তেমন ক্ষতি হয়নি।’

মেজর মশিউর রহমান বলেন, ‘তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও রাজউকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে র‌্যাব কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি, বেসমেন্ট থেকেই এই বিস্ফোরণ। এটা স্বাভাবিক কোনও বিস্ফোরণ নয়। এটি একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ। এটি গ্যাস লিকেজের কারণে হয়ে থাকতে পারে। তবে অন্য বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া এ ঘটনা এসি থেকে ঘটার আশঙ্কা খুবই কম।’

তিনি বলেন, ‘এখান থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা চলছে। এখানে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে নাকি অন্য কোনও কিছু জড়িত, তা-ও জানার চেষ্টা করছি।’

এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যার পর মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকায় একটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় দুই শতাধিক। বিস্ফোরণের সময় বিকট শব্দে আশপাশের অন্তত সাতটি ভবনের কাচ উড়ে যায়। রাস্তায় থাকা তিনটি বাসের কাচ ভেঙে যায়।

ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মগবাজারের তিনতলা ভবনটির গ্যাসের সরবরাহ স্থায়ীভাবে বন্ধ করেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। অবৈধ সেই সংযোগ থেকে গ্যাস ব্যবহার করা হতো ভবনে। গ্যাস-সংযোগের পাইপলাইনের ছিদ্র (লিকেজ) থেকে গ্যাস বের হয়ে ভবনের নিচতলার শরমা হাউজের ভেতরে জমা হয়। সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরিত ভবনে উদ্ধার অভিযান করা ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য এবং সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ঘটনায়ও পৌর ভবন থেকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্রে বিস্ফোরক দ্রব্য না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

‘মগবাজারের বিস্ফোরণের পুনরাবৃত্তি সিদ্দিকবাজারে’

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সিদ্দিকবাজারের পৌর ভবনে ক্যাফে কুইন নামক রেস্টুরেন্টের কিচেন রুম ছিল। তবে সেটি সাত আট বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ওই ভবনের মালিক রেজাউল রহমান রেস্টুরেন্টটি চালাতেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে এসে আগে গ্যাসের গন্ধ পেয়েছি। তখন আগে গ্যাসের লাইন বন্ধ করে কাজ শুরু করি। ভবনের ভেতরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
 
উপপরিচালক বলেন, ‘এটা যেহেতু আবাসিক ভবন, সেহেতু গ্যাস লাইন থাকাই স্বাভাবিক। আর শুনেছি বিস্ফোরণ হওয়া রুমে আগে হোটেলের কিচেন রুম ছিল। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসেছে। তারাও কাজ করছে। এখন পর্যন্ত এমন বিস্ফোরক আলামত পাওয়া যায়নি।’

সব সংস্থা গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের কথা বললেও গ্যাস থেকে কিংবা গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়নি বলে দাবি করেন তিতাস গ্যাস লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. সেলিম মিয়া। বিল্ডিংয়ের ভেতরে একটি রাইজারের আলামত পাওয়া গেছে এবং এটি অক্ষত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সেলিম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনার পর তিন পর্যায়ে আমরা তদন্ত করেছি। গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে গ্যাসের আলামত নেওয়ার চেষ্টা করছি। তদন্তের পর সব বিষয় বেরিয়ে আসবে। এখন পর্যন্ত গ্যাসের লিকেজের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে, এ রকম কোনও বিষয় পাচ্ছি না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এখনই কেউ ঘটনার মূল বিষয় সম্পর্কে বলতে পারছে না।’

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিচালক হামিদুল রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনের বৈধতা ও অবৈধতার বিষয়ে বলতে পারছি না। অফিস বন্ধ থাকায় এখন পর্যন্ত কাগজপত্র বের করে ভবনের বৈধতা-অবৈধতার বিষয়ে জানতে পারিনি।’

ভবনের স্থাপনার বিষয়ে হামিদুল রহমান বলেন, ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ১৯৮০ দশকে নির্মিত। আমরা ফাইল খুঁজে দেখার চেষ্টা করছি। তবে এই ভবনের বৈধতা নেই বলে ধারণা করছি। এ ছাড়া চারতলা থেকে সাততলাও অবৈধভাবে নির্মিত।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার এলাকায় সাততলা একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত, আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক। কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। এরপর শুরু হওয়া উদ্ধার অভিযান রাত পৌনে ১১টার দিকে স্থগিত করা হয়। বুধবার (৮ মার্চ) সকালে ফায়ার সার্ভিস আবার উদ্ধারকাজ শুরু করে।

/এনএআর/এমওএফ/
টাইমলাইন: সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ
০৮ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৬
‘মগবাজারের বিস্ফোরণের পুনরাবৃত্তি সিদ্দিকবাজারে’
০৮ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৮
সম্পর্কিত
গাজীপুরে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ পোশাক শ্রমিকের বার্ন ইনস্টিটিউটে মৃত্যু
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা: রাজউক চেয়ারম্যান
শুক্রবার ১৫ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সর্বশেষ খবর
এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভাজন বড় বাধা: ঢাবি উপাচার্য
এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভাজন বড় বাধা: ঢাবি উপাচার্য
ভারত এক ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিয়ে নিজেকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু
ভারত এক ফ্যাসিস্টকে জায়গা দিয়ে নিজেকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে: দুদু
প্রশাসনে বৈষম্যের অভিযোগে কর্মচারী ঐক্য ফোরামের হুঁশিয়ারি
প্রশাসনে বৈষম্যের অভিযোগে কর্মচারী ঐক্য ফোরামের হুঁশিয়ারি
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা : বাংলাদেশকে আবারও সতর্ক করলো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা : বাংলাদেশকে আবারও সতর্ক করলো ভারত
সর্বাধিক পঠিত
এক সংবাদ একই শিরোনামে ১৩ পত্রিকায়, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
এক সংবাদ একই শিরোনামে ১৩ পত্রিকায়, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
রাজধানীতে আবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
রাজধানীতে আবার আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে লিখলেন ‘ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না’
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে লিখলেন ‘ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না’