থানায় না গিয়ে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পদ্ধতি চালু করা হয় ২০২২ সালের ২১ জুন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনলাইন জিডির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে http://gd.police.gov.bd পোর্টালে ঢুকে যে যেখানেই থাকেন না কেন, সংশ্লিষ্ট থানায় অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। জিডির এই কার্যক্রম বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। তবে অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। থানাগুলোতে কর্মরত অনলাইন জিডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরাও এর বাইরে নয়।
পুলিশের ওয়েব সাইটে সাধারণ ডায়েরি করার বিষয়ে দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়—‘আপনার হারানো ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত জান-মালের বিষয়সহ যেকোনও বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। সংশ্লিষ্ট থানা থেকে আপনার অভিযোগের ধরন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আপনাকে অবগত করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি জিডির যোগ্য হয়, তাহলে সেটি জিডি নম্বর এবং তদন্ত অফিসারের বিবরণীসহ আপনাকে ডিজিটাল জিডির কপি পাঠানো হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি মামলার যোগ্য (আমলযোগ্য অপরাধ) হয়, সেক্ষেত্রে অভিযোগের প্রিন্ট কপি, অথবা অভিযোগের কোড নম্বরসহ আপনাকে থানায় উপস্থিত থাকতে হবে।’
‘অভিযোগ করতে যা প্রয়োজন হবে তা হচ্ছে—জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, সচল মোবাইল নম্বর, লাইভ ছবি। এক্ষেত্রে অনলাইন জিডি অ্যাপস এবং ওয়েব পোর্টালে যেসব সুবিধা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে—খুব সহজে অভিযোগটি পুলিশকে জানাতে পারবেন এবং অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন। অভিযোগের তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন। অনলাইনে অভিযোগের (জিডি) কপি ডাউনলোডসহ ডিজিটাল কপি যে কাউকে পাঠাতে পারবেন।’
কিন্তু দেখা গেছে, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ সাবমিট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা সম্পূর্ণ তথ্য চলে আসে। এরপর লাইভ ছবি দেওয়ার ধাপে গেলে বলা হয়— জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবির সঙ্গে বর্তমান ছবির কোনও মিল নেই। এই প্রতিবেদক অনলাইন জিডির প্রক্রিয়ায় ঢুকে একাধিকবার চেষ্টা করেও সফল হননি।
ফলে অনলাইন জিডি করতে প্রথমে যে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, সেটাই করতে পারছেন না আগ্রহী ব্যক্তি। আর রেজিস্ট্রেশন করা না গেলে অনলাইনে জিডিও করা যাবে না। সাধারণত যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অনেক আগের, সেটার ছবি ও বর্তমান ছবির মিল থাকার কথা নয়।
অনলাইন জিডি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি থানা ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সার্কেল, জোন কিংবা জেলা বা মেট্রো ইউনিটসহ সব পর্যায়ে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে আরও পুলিশ সদস্যকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টির সমাধান জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যার ছবি মিলবে না, তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ছবিটি প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্রের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হালনাগাদ করে নিতে পারেন।’
ডিএমপির অপর একটি থানার ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনলাইনে জিডি-সেবা চালু হলেও জিডির কপি প্রিন্ট করে সরকারি জিডি বইয়ে আগের মতোই সংরক্ষণ করতে হয়। তাছাড়া ম্যানুয়ালি যেসব জিডি হয়, সেগুলোও অনলাইন করতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এতে থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। ফলে সব জিডি অনলাইনে করা হয়ে ওঠে না।’ তিনি দাবি করেন, তবে নাগরিকরা থানায় না এসেও অনলাইনে জিডি করতে পারছেন।
অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে ছবির অমিলসহ নানা ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা অনেক আগে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তখনকার ছবির সঙ্গে বর্তমান ছবির মিল না থাকারই কথা। কেউ তখন দাড়ি ছাড়া ছবি তুলেছেন, এখন হয়তো তিনি দাড়ি রেখেছেন, সেক্ষেত্রে ছবিতো হুবহু মিলবে না।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছে আরও অভিযোগ ছিল।
পুলিশের একই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব জটিলতা সহজ করা না হলে অনলাইন জিডির কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যাবে না। তাই অনলাইন জিডির সফটওয়্যারে কীভাবে এটার সমাধান করা যায়, সেটা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে।’