মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে হলে চালক ও যাত্রীদের মাথায় হেলমেট বাধ্যতামূলক। কারোর হেলমেট না থাকলে তিন মাসের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। দণ্ড ও জরিমানা ঠেকাতে যাত্রীদের জন্য যে হেলমেট ব্যবহার করা হয় তা সাধারণত সাইকেলের হেলমেট, দ্রুতগতির যানে এই হেলমেট কোনোভাবেই কার্যকর নয়। যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটলে মানহীন পাতলা এই হেলমেট কোনোভাবেই সুরক্ষা দেবে না জেনেও কেবল জরিমানা ঠেকাতে এই হেলমেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে মোটরবাইক যাত্রী সংখ্যা। জ্যাম এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে যাবার জন্য অনেকেই বেছে নেন এই বাহন। তবে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে রাইডারদের কোনও বিশেষ ভাবনা নেই, যাত্রীরাও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সেই হেলমেটই পরছেন।
মোটরযান চলাচল আইনের ৪৯-চ ধারায় বলা হয়েছে, ‘চালক ছাড়া মোটরসাইকেলে একজনের অধিক সহযাত্রী বহন করা যাবে না। চালক ও সহযাত্রীকে যথাযথভাবে হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনও ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ। এজন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) মাসের কারাদণ্ড, বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং, চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা যাবে’।
কিন্তু হেলমেটের ধরন কী হবে সেটি আইনে উল্লেখ না থাকায় সেই সুযোগটি নিয়ে অরক্ষিত চলাচল চলছে।
রাজধানীর বাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাতলা হেলমেটগুলো ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। আবার বিভিন্ন সময় চুরি হয়ে যাওয়া হেলমেট চাইলে টোকাইদের কাছ থেকে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় পাওয়া যায়। যাত্রীদের জন্য রাখা পাতলা প্লাস্টিকের এসব হেলমেটের ফিতা থাকে ঢিলেঢালা। কিছু কিছু হেলমেটে নেই ফিতা আটকানোর ক্লিপও। যাত্রীদের মাথায় এগুলো জুতসইভাবে বসেও না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। গতিসম্পন্ন বাহন দুর্ঘটনার শিকার হলে এই হেলমেট কোনোভাবেই সুরক্ষা দেবে না।
যাত্রীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে প্রেস ক্লাবের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইক চালক ফিরোজ হোসেন জানান, আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারি না। ভালো হেলমেট থাকলে চুরি হবার সম্ভাবনা থাকে। প্লাস্টিকের হেলমেট কম দামে কেনা যায়।
কিছু যাত্রী সুরক্ষিত হেলমেট ব্যবহার করতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক যাত্রী বড় হেলমেট পরতে চায় না। হাতে নিয়ে বসে থাকে এবং এর জন্য মামলাও খেয়েছি। অনেকে আবার বলে এই হেলমেট পরলে গরম লাগে। তাই এই হালকা হেলমেট ব্যবহার করি।
আরেক মোটরবাইক চালক পারভেজ জানান, মূলত পুলিশের চাপে হেলমেট পরা হয়। যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে কখনও ওইভাবে ভাবি নাই। বিষয়টা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ নেই, তাই এমনি চলে যাচ্ছে। তবে পুলিশ যদি এ ধরনের হেলমেট ধরে তাহলে দেখবেন এই হেলমেটগুলো উঠে গেছে।
সবুজ নামের এক যাত্রীকে এ ধরনের হেলমেট ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো তো হেলমেট না, ক্যাপ। বেশিরভাগ হেলমেট লুজ, ফিতা কোনোমতে পেঁচিয়ে চলতে হয়। আবার বাইক চলার সময় জোরে বাতাসে মাথা থেকে সরে পিছনে চলে যায়। হোসাইন নামে আরেক যাত্রী বলেন, ভাই বলে লাভ নাই। কেউ ভালো হেলমেট না রাখলে যাত্রীরা কি করবে।
আমিন নামে মধ্যবয়সী এক যাত্রী বলেন, বড় হেলমেটে গরম লাগে। ঘামে ভেজা থাকে বলে জীবাণু থাকতে পারে। তাই এই হেলমেটেই ভালো বাতাস লাগে। পাতলা হেলমেটে ঝুঁকি মনে হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় কোনও ঝুঁকি নাই। জ্যাম বেশি। জ্যামই বড় সমস্যা, হেলমেট না।
যাত্রীদের ব্যবহৃত মানহীন হেলমেটের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে হাইকোর্ট মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট নুর ইসলাম বলেন, হেলমেটের মান যাচাই-বাছাইয়ের কোনও আইনি নির্দেশ নেই। আইন অনুযায়ী শুধু মাথায় হেলমেট না থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কী ধরনের হেলমেট পরতে হবে এরকম বাধ্যবাধকতা এখনও করা হয়নি। হলে অবশ্যই আমরা বিষয়টা দেখবো।
একই ধরনের মন্তব্য করেন গ্রিন রোড সিগন্যালে দায়িত্বরত সার্জেন্ট মীর সবুজ। বাইক যাত্রীদের অসুরক্ষিত হেলমেটের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু হেলমেটের মান নিয়ে কোনও আইনি নির্দেশনা নেই। আমরা শুধু মাথায় হেলমেট না পরলে আইনের ব্যবহারটা করি।