অর্থ সংকটের কারণে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। হুজি সদস্যরা ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন এবং তা বাস্তবায়ন করতো ডাকাত দলের সদস্যরা।
সোমবার (৩ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন এসব তথ্য জানান।
রবিবার (২ মার্চ) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় এলাকা থেকে ১২ জন ডাকাতকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন ও হুজি দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। তাদের মূলত মূল টার্গেট করতো নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার রয়েছে এমন ব্যক্তিদের।
ডাকাতির পরিকল্পনা করতো হুজি আর বাস্তবায়ন করতো ডাকাতরা। এ পর্যন্ত ৯টি ডাকাতি করে ৫ কোটি টাকা লুণ্ঠনের কথা স্বীকার করেছে। ডাকাতি থেকে পাওয়া অর্থ ৩০ ভাগ টাকা সংগঠনের কাজে ব্যয় করে আসছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা ধোলাইপাড় পূবালী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে জিম্মি করে ডাকাতির পরিকল্পনার জন্য জড়ো হয়েছিল।
তিনি বলেন, এ বছরের ১৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানিতে ডাকাতির চেষ্টাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এক পুলিশ সদস্যকে গুলি করে তারা পালায়। ডাকাত দলের সদস্যরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছে।
গ্রেফতার করা ডাকাত আতিকুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে, রামপুরার বাসা থেকে অস্ত্রসহ হুজি সদস্যকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা।
আব্দুল বাতেন বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি উজ্জ্বলের নির্দেশে ও সংগঠন পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত উজ্জ্বলকে যেকোনও উপায়ে মুক্ত করার পরিকল্পনা তাদের ছিল।
বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে এই সংগঠনগুলো পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে আর্থিক সক্ষমতা ছিল তা আগের মতো না থাকায় তারা ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ডাকাতি থেকে লুণ্ঠিত অর্থ সংগঠনের কাজে ব্যয় করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃত হুজি সদস্যরা হলেন, হাফিজ ওরফে খালিদ ওরফে ইব্রাহিম গাজী, মামুনুর রশিদ ওরফে বাচ্চু মোল্লা, মোফাজ্জল হোসেন ওরফে বড় ভাই ওরফে দাদু (ডাকাত সর্দার), মোহাম্মদ জহির উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে চৌধুরী, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ওরফে নয়ন, লাড্ডু মোল্লা, কাইয়ুম শিকদার, আলাউদ্দিন শেখ, মুন্সি খসরুজ্জামান মেজর ওরফে মেজর, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হাওলাদার, সুব্রত দাস, মিন্টু কর্মকার, এবং অলিউল্লাহ হাওলাদার অলি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তাদের কাছ থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, একটি বিদেশি একে-২২ বোরের রাইফেল, একটি পাইপগান, ৪১ রাউন্ড গুলি, ১২টি জিহাদি বই, গান পাউডার, ককটেল, পাঁচটি কালো রঙের মুখোশ ও সংগঠন পরিচালনা করার কাজে ব্যবহৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়। এছাড়া চারটি বিদেশি পিস্তলের ৩৩ রাউন্ড গুলি, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ, চাপাতি, ছোড়া কাটার, হেক্সো ব্লেড, স্লাইড রেঞ্জ ও স্কচটেপ উদ্ধার হয়েছে।