X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২

জাবি শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যা মামলায় আপিল শুনানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৫৯আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৫৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) ও দণ্ডিত আসামিদের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে। পরে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

প্রথম দিনের শুনানি শেষে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল। পরে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জাবি শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার রায়ে পাঁচ জনকে ফাঁসি ও ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। ওই মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। আজ শুনানি শেষে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ধার্য করেছেন।’

২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি বিকালে ইংরেজি বিভাগের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জুবায়ের আহমেদকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এরপর তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে ওইদিন রাতেই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে মারা যান তিনি।

জুবায়ের হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই)  মীর শাহীন শাহ পারভেজ ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।

আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব তপু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এরপর ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার আগে চার্জশিটভুক্ত ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

পরে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ১৩ আসামির মধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসি ও ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। এছাড়া, বাকি দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু, খান মো. রইছ ওরফে সোহান, জাহিদ হাসান এবং মাহবুব আকরাম। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা  হলো, ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ, নাজমুস সাকিব তপু, মাজহারুল ইসলাম, কামরুজ্জামান সোহাগ, শফিউল আলম সেতু এবং অভিনন্দন কুণ্ডু অভি। তাদের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

বেকসুর খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, মো. নাজমুল হুসেইন প্লাবন ও মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ।

দণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই জাবির বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ১৩ আসামির মধ্যে সাত জন কারাগারে আটক। বাকিরা পলাতক।

এদিকে, রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলায় বর্তমান ছাত্র রাজনীতির চরম বিশৃঙ্খলা, নীতিহীন ও আদর্শচ্যুত চেহারা উন্মোচন করেছেন। আসামি আশিকুল ও রাশেদুল ২০০৮ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভিকটিম জুবায়েরও ওই সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে সরকার পরিবর্তনের পর তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।

এ ধারাটি ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের মধ্যে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা, মারধর, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন (র‌্যাগিং), ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অতিমাত্রায় উৎসাহী করে তোলে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ (সিন্ডিকেট) প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে সক্ষম হয়নি। আর এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের শেষ পরিণতি হচ্ছে জোবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকলেও নিকট অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত কোনও হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার হয়নি। যা প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে অতিমাত্রায় উৎসাহিত করেছে।

মিডিয়া প্রসঙ্গে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কোনও মামলার বিষয়ে মিডিয়া কর্মীদের তৎপরতা সুষ্ঠু বিচারে ইতিবাচক ও সহায়ক ভূমিকা রাখে–তা প্রশংসনীয়। কিন্তু মিডিয়া কর্মীদের অপতৎপরতা কোনও কোনও সময় সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার বিঘ্নিত করে।

বিষয়টি উপলব্ধি করে মিডিয়া কর্মীদের বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন আদালত।

/বিআই/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এআই দক্ষতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩ তম, বিসিআই বলছে এখনই প্রস্তুতির সময়
এআই দক্ষতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩ তম, বিসিআই বলছে এখনই প্রস্তুতির সময়
ঘটনাবহুল ম্যাচে ১০ জনের মোহামেডানকে হারাতে পারেনি আবাহনী
ঘটনাবহুল ম্যাচে ১০ জনের মোহামেডানকে হারাতে পারেনি আবাহনী
‘উচ্চশিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে’
‘উচ্চশিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে’
শ্রীলঙ্কায় হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের যুব ওয়ানডে সিরিজ
শ্রীলঙ্কায় হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের যুব ওয়ানডে সিরিজ
সর্বাধিক পঠিত
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কড়া কথা বললে অনেকের নাকি কষ্ট লাগে: মামুনুল হক
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?
ভারত কি পাকিস্তানে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করতে পারবে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে ঢিল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা