মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আপিলকে ঘিরে দেশে অস্থিরতা ও সরকারকে বিপাকে ফেলার চক্রান্তের অংশই চলমান হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যুদ্ধাপরাধ মামলায় দলটির আরেক নেতা মীর কাসেম আলীরও আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত।এ দুই অপরাধীকে বাঁচাতে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা সুপরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা।
রাজধানীর কলাবাগানে জোড়া খুন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গাজীপুরে কারারক্ষীসহ চলমান হত্যাকাণ্ডগুলো ক্ষমতাসীনদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। সরকার সাময়িক চাপেও পড়েছে বলে স্বীকার করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ উদঘাটন করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাপের মধ্যেও সরকার এখনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনিভাবেই এসব ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন: বিস্তৃত হচ্ছে ‘জঙ্গি’ টার্গেট
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন,এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্য সরকারকে অস্থির করে তোলা।একটি চিহ্নিত মহল এসব করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। খুব শিগগিরই রহস্য উদঘাটন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা বলেন,আগামী ৩ মে জামায়াত নেতা নিজামীর আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্যে শুনানির দিন ধার্য আছে। রায় পুনর্বিবেচনার শুনানির নিষ্পত্তি হলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হবে নিজামীকে।বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই দলটির অনুসারীরা আবারও টার্গেট কিলিং শুরু করেছে-সরকারকে অস্থির করে তুলতে।
জানা গেছে,গত তিনদিনের হত্যাকাণ্ডগুলো পর্যালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।তাদের পর্যালোচনায় বেরিয়ে এসেছে নিজামীর রায়কে কেন্দ্র করে আবারও সুপরিকল্পিত ও টার্গেট কিলিংয়ে মেতে উঠেছে জামায়াত-শিবির। আর তাদের ইন্ধন দিচ্ছে বিএনপি। তারা বলেন, আমাদের এ পর্যালোচনা বা বক্তব্য এসব হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়া বা দায় এড়ানোর জন্যে বলা নয়,এসব বক্তব্য নিশ্চিত হয়েই বলা।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী রচনা করা আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্ম
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলমান হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে বিশদ পর্যালোচনায় বেরিয়ে এসেছে এসব সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। আর এর সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও তাদের অনুসারীরা যুক্ত আছেন।বিএনপি এর পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
এসব অভিযোগ দায় এড়ানোর অংশ কিনা জানতে চাইলে এই নেতা বলেন,চলমান এসব হত্যাকাণ্ডে জামায়াত জড়িত। এটা নিশ্চিত হয়েই বলছি আমরা,এটা দায় এড়ানো বা রাজনৈতিক বক্তব্য নয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন,একাত্তরে যারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে এখনও তারাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।তবে সরকার অবস্থান এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স। শিগগিরই অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন,নিজামীর রিভিউ আপিল শুনানির দিন আগামী ৩ মে। জামায়াত-শিবির ও তাদের অনুসারীরা প্রায় নিশ্চিত যে, নিজামীর মৃত্যুদণ্ড এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই তারা সরকারের বিরুদ্ধে আরেকবার মরণ কামড় দিয়ে নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী এও বলেন,এটি তাদের শেষ যুদ্ধ। এবারও তারা ব্যর্থ হবে, এরপরে তারা নির্মূল হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: ‘সিসিটিভির ফুটেজে ঘাতকরা’ (ভিডিও)
একদিন পর মঙ্গলবার দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এটা সরকার সহজে মেনে নেবে না। সরকার কারও ওপর আক্রমণ করে নয়,আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেউ বাঁচতে পারবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বলেন, জামায়াতের এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রও আছে।১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আগেও সরকারকে অস্থিতিশীল করতে দেশে গুপ্ত হত্যা করা হয়েছে। তখনও এর পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তি জড়িত ছিল।
উল্লেখ্য,সোমবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের মূল ফটকে রুস্তম আলী নামে এক কারারক্ষীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।কাশিমপুর কারাগারে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীরা বন্দি হিসেবে রয়েছেন।
এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও একটি যোগ সূত্রের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা। তিনি বলেন,আগামী নভেম্বরে আমেরিকায় নির্বাচন। এরপর নতুন বছরের শুরুতে নতুন রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় বসবেন দেশটিতে। ইতিমধ্যে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত করেছেন হিলারি ক্লিন্টন। প্রেসিডেন্ট পদে এখন পর্যন্ত তিনি আলোচিত প্রার্থী। হিলারির প্রার্থীতা নিশ্চিত এমন ভেবে অতি উৎসাহী বিএনপি-জামায়াত দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে।
/পিএইচসি/এমএসএম /আপ-এপিএইচ/