দারুণ অগ্নি বানে রে/ হৃদয় তৃষায় হানে রে/ রজনী নিদ্রাহীন/ দীর্ঘ দগ্ধ দিন/ আরাম নাহি যে জানে রে। এক সপ্তাহ ধরে চলা তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। তারপরও থেমে নেই প্রাত্যহিক কাজ । আর এই তাপদাহের মধ্যেই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ। তীব্র তাপদাহে বাইরে বের হবেন যারা, তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফ্যাশন পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, অবশ্যই হালকা রঙের সুতি কাপড় পড়া স্বাস্থ্যসম্মত হবে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তাপদাহ আরও কয়েকদিন চলবে। আগামীকাল বছরের প্রথম দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দুই বছরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গতবছর একই পরিস্থিতি ছিল। বৃষ্টি হয়নি। তবে বাতাসে আদ্রতার হেরফের থাকতে পারে। তিনি বলেন, দেশজুড়ে তাপদাহ চললেও বর্ষবরণকে ঘিরে ঢাকার নানা জায়গা থেকে আগাম বার্তা জানতে তাদের সারাদিনই ফোন করা হচ্ছে। কারণ, মূল অনুষ্ঠানগুলো ঢাকাতেই হয় এবং সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ করতে চান। রাশেদুজ্জামান বলেন, আজ বুধবার ঢাকার তাপমাত্র ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল আরেকটু বাড়তে পারে। তবে সন্ধ্যার পর খুব সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। তিনি এও উল্লেখ করেন যে পরিমাণ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, সেটা হলেও গরম বিন্দুমাত্র কমবে না।
১৫ তারিখের আগে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
আরও পড়তে পারেন: রাজধানীতে পানির সঙ্কট ভয়াবহ
এই তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানতে চাইলেও পরিসংখ্যান বলছে, গত এক সপ্তাহজুড়ে সিলেট ছাড়া প্রায় বৃষ্টিশূন্য পুরোদেশ। সিলেট অঞ্চলে সামান্য যে বৃষ্টি হয়েছে, তাও কালবৈশাখীসহ। এরই মধ্যে দেশের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, গত সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর আবহাওয়া এ ধরণের বৈরী আচরণ করবে। এ সময়ে মৃদু ও মাঝারি তাপদাহ অস্বাভাবিক নয়।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ৩৮.৮, রংপুর ৩৬.৬, সিলেটে ৩৪.৮ ও চট্টগ্রামে ৩২.৯ ডিগ্রি।
আরও পড়তে পারেন: সবার জন্য বৈশাখী বোনাস বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে সরকার
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিলে গরম যেমন দাপট দেখাবে, তেমনি ঝড়-বৃষ্টি আর নিম্নচাপও থাকতে পারে। আগামী এক মাসে প্রায় সিলেটে ৩০০ থেকে ৩৭০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আট থেকে ১০ দিনে ১৪০ থেকে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে যে এক-দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, তার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এ অবস্থায় কী ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে প্রশ্নে চিকিৎসক গোবিন্দ বনিক বলেন, বেশি করে পানি ও শরবত জাতীয় জিনিস পান করবেন এবং খাড়া রোদটাকে এড়িয়ে যাবেন। বিশেষত শিশুদেরকে নিয়ে সকালে এবং সন্ধ্যার পর রোদ কমলে বাইরে হওয়া ভাল।
এদিকে ফ্যাশন হাউস বিবিয়ানার প্রধান লিপি খন্দকার বলেন, আমাদের এই সময়টায় ভীষণ তাপের কারণে হালকা রঙের পোশাক পরারই আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। আর স্বাভাবিকভাবেই যাদের সামর্থ আছে তারা নববর্ষে সূতি কাপড় পরেন, সেটাও যেন নরম হয় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এপিএইচ/