X
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
৫ বৈশাখ ১৪৩২

আমি দুর্নীতিবাজ-হাইজ্যাকারদের পিতা নই: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:০০আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:০০

দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বরের  ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলার দুঃখী মানুষকে বেশি দিন অপেক্ষা করালে, একটা প্রচণ্ড ঝড় উঠতে পারে। সে ঝড়ে অনেকেই ভেসে যেতে পারে। জনগণের সেই সংগ্রামে আমি আবারও নেতৃত্ব দিতে পারি। ১৯৭২ সালের এ দিন (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে শেরেবাংলা নগরে বিজয় দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর কর্মচারী সমিতি প্রদত্ত সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন। খন্দকার আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে একটি মানপত্র দেওয়া হয়।

প্রত্যেকের অন্ন ও কর্মসংস্থান

সভায় মুজিবনগর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বক্তৃতা করেন। এর আগে তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের একটি বাণী ও রচনা পাঠ করা হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, এখনও অনেক সরকারি কর্মচারীর মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। যদি তাদের মত ও পথের প্রত্যাশিত পরিবর্তন না আসে, তাহলে তাদের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা সংগ্রামের ৩০ লাখ শহীদ ও সংগ্রামী দুঃখী মানুষের জাতির পিতা। দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর ও হাইজ্যাকার কোনও লোকের পিতা নই।’ তিনি বলেন, ‘যে জাতির চরিত্রের পরিবর্তন আসে না, সে জাতির উন্নতি নেই।’ বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘বাংলার প্রত্যেকটি মানুষের অন্ন ও কর্মসংস্থান হয়েছে দেখে যেতে পারলে শান্তিতে মরতে পারবো।’

দৈনিক বাংলা, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের ইতিহাস আমাকে লিখতে হবে

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির ইতিহাস বিকৃত না করার জন্য পুনরায় আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভুল ইতিহাস লেখা হলে জনগণ সত্যিকারের ইতিহাস জানতে পারবে না।’ তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস আমাকে লিখতে হবে, অন্য কেউ তা পারবে না। অবশ্য আমার গুটিকয়েক সহকর্মীও পারবেন।’

জনগণকে ভালোবাসলে জনগণ তাকে ভালোবাসে

শেখ মুজিব বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৩ বছর রাজনীতি করেছি। কখনও সুখ ও আদর্শের রাজনীতি করি নাই। জনগণকে ভালোবাসলে জনগণ তাকে ভালোবাসে। তবে সে ভালোবাসায় কোনও কৃপণতা থাকলে চলবে না।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না এলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা কতদিন টিকবে, তা কারও জানা নেই। মানুষ যদি পেট ভরে খেতে না পারে, কিংবা তার কর্মস্থানের ব্যবস্থা না হয়, তাহলে এই স্বাধীনতা ও শহীদদের রক্তদান বৃথা যাবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, আজ আমরা স্বাধীন বাংলার মাটিতে একত্রিত হতে পেরেছি। মুজিবনগরে আমার সহকর্মীরা সরকার গঠন করে যে সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন, জাতি সে কথা চিরদিন মনে রাখবে। মুজিবনগরের কর্মচারীদের দুঃখ-কষ্টের কথা বাংলার মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধুকে মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক প্রচারপত্রগুলো উপহার দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। জয় বাংলা পত্রিকা ও দেশাত্মবোধক গানের সংগ্রহ উপহার দেন পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক আব্দুল মান্নান। বাংলাদেশের পতাকা ও স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র উপহার দেন মুজিবনগর কর্মচারী সমিতির সভাপতি খন্দকার আসাদুজ্জামান। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মিরপুরে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

বাংলাদেশ অবজারভার, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২

১০ জানুয়ারি উৎসব হবে

জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখকে ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এ দিনটিতে স্বাধীন দেশে পা ফেলেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে কারিগরি মিলনায়তনে এদিন (১৯ ডিসেম্বর) এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ-ভারত ও সোভিয়েত সম্পর্ক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সুধীজনেরা বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর এই নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এদিকে ঢাকায় এদিন বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সচিব নূর মোহাম্মদ এবং সোভিয়েত পররাষ্ট্র দফতর সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ভি এন সফিনস্কি চুক্তিপত্রে সই করেন।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মুজিব বর্ষ উদযাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের খরচ ১২৬১ কোটি
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
সর্বশেষ খবর
এবার হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা
এবার হজে যাবেন ৮৭ হাজার জন, নেওয়া হচ্ছে যেসব ব্যবস্থা
এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩৯০
এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩৯০
অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে নীরব পাকিস্তান
অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে নীরব পাকিস্তান
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে
চীনের অর্থনীতি আবারও চমকে দিলো বিশ্বকে
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
পরীক্ষা ভালো হয়নি, বাড়ি ফেরার পর ঘরে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
টিপকাণ্ডে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সেই কনস্টেবলের মামলা
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
সন্তান বিক্রি করে জুয়েলারি ও মোবাইল কিনেছেন মা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
‘বাবা বাইরে মা ঘুমিয়ে’, দুই শিশুসন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করলো দুর্বৃত্তরা
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা
জাতীয় পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় যারা