১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসা নিতে লন্ডনের পথে রওনা দেবেন। যাওয়ার আগে তিনি শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন। লন্ডনে তিনি দুই সপ্তাহ অবস্থান করবেন বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ জুলাই সকাল ৯টায় এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিশেষ বিমানে করে লন্ডন যাবেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে সংবাদ সংস্থার (বাসস) খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অবস্থানকালে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। অন্যান্য যেসব কাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতে হয় শিল্পমন্ত্রী সেগুলো দেখবেন।
বঙ্গবন্ধু লন্ডনে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর পিত্তকোষ পাথর হয়েছে। তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড একাংশ অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি সম্ভবত দুই সপ্তাহ দেশের বাইরে থাকবেন। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডনের এক ক্লিনিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যাবেন বেগম মুজিব, তাদের তিন পুত্র, দুই কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের কয়েকজন সদস্য। তাদের মধ্যে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারি জনাব রফিক উল্লাহ চৌধুরী ও তার পিআরও আবুল হাসেম। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলামও তার সঙ্গে যাচ্ছেন।
গত ২২ জুলাই তলপেটে ব্যথা হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বিশ্রামে ছিলেন। এর আগে আরও তিনবার তার এরকম ব্যথা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা ও মার্চে মস্কো সফর কালে এবং গত ৫ জুলাই তিনি এই ব্যথায় আক্রান্ত হন। বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসক নুরুল ইসলামের মতে, অস্ত্রোপচারে তার কোনও অসুবিধা হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ গতকাল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন এবং তার অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুর কাছে বর্ণনা করেন।
এদিকে অসুস্থ থাকার পরেও বঙ্গবন্ধু ২৫ জুলাই বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের কাজ করেন। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ও মন্ত্রিসভার সদস্যরাও তার সঙ্গে দেখা করেছেন এইদিনে। নয়াদিল্লি সংবাদদাতা জানান, ঢাকা থেকে লন্ডন যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু বোম্বাই (বর্তমানে মুম্বাই) ও রোম হয়ে যাবেন। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তার সঙ্গে দেখা করবেন। ঢাকার সঙ্গে নিয়মিত খবর পেতে টেলেক্স যোগাযোগ স্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়। এদিকে সংবাদ সংস্থা এনা জানাচ্ছে লন্ডনে বসবাসকারী বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব ডক্টর ওয়াল্ড হাইম বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে বাংলাদেশকে শিগগিরই জাতিসংঘভুক্ত করা সম্ভবপর হবে। অবশ্য এই প্রচেষ্টা স্বস্তি পরিষদ থেকে আসা দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি সফর শেষে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সাহায্য করার ব্যাপারে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি জানান যে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত সিমলা বৈঠকের আলাপ-আলোচনায় তিনি সন্তুষ্ট। এই আলাপ-আলোচনা একটি রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনার দ্বার উদঘাটন করেছে এবং তার ধারণা বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্ত প্রশ্নটি সমাধান সম্ভব তবে উদ্যোগ অবশ্যই স্বস্তি পরিষদ থেকে আসতে হবে।
জাকার্তা থেকে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইন্দোনেশিয়া এখন বাংলাদেশের মনোভাব বুঝতে পেরেছে। তারা মনে করে স্বীকৃতির আগে এই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনও আলাপ হওয়া সম্ভব না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ সফর শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এখন বাংলাদেশের সঙ্গে একমত যে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার আগে দু’দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সরাসরি কোনও আলাপ-আলোচনা হতে পারে না।’
দু'দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়াতে তার সফর সফল হয়েছে বলে সামাদ জানান। তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার দীর্ঘ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং পাকিস্তান সম্পর্কে আমাদের প্রকৃত মনোভাব তারা এখন বুঝতে পেরেছেন।’