কেউ বিশেষ অপরাধে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাউল শিল্পী শরিয়ত বয়াতির গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ বুধবার (২২ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রশ্ন-উত্তরে জাসদের সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাউল শিল্পীরা এমন কোনও কাজ যেন না করেন, যে কাজের জন্য বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নেওয়া বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার। তাদেরও সচেতন করা দরকার।’
শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে ইনু বলেন, ‘আইসিটি আইনে শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে বাউল শিল্পীদের চুল কেটে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসকেরা যে জবরদখলের রাজনীতি শুরু করেছিলেন, তখন যাত্রা, পালাগানসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন; তার রেশ এখনও চলছে।’
এ সময় বাউল গান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ইনু বলেন, ‘আপনার সরকার বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেবে কিনা?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিয়ে বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্যে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বাউল গানের তো কোনও দোষ নেই। কিন্তু বাউল গান যারা করেন, তাদের ব্যক্তিবিশেষ কোনও অপরাধে জড়িত হলে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে গানের কোনও সম্পর্ক নেই। আর যারা বাউল গান করছেন, তারা সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে, এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেন? বাউল শিল্পীরা কোনও অপরাধ করেন না বা করেননি—এটা তো ঠিক নয়। নিশ্চয়ই কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ইনুর প্রশ্নের সূত্র ধরে সামরিক শাসন আমলের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, সেখানে গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না। সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা ক্ষমতায় এসেছেন। একের পর এক ক্যু হয়েছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় এসেই রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আজ থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম।’ আর হয়েই তাদের প্রথম কাজ ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। সুইপারের কাজটাই তারা আগে করেছেন। এটা আমরা সবসময় দেখেছি। প্রথমে দেখা যায়, রাস্তার পাশে কঁচু-ঘেচু যা থাকে, কেটেকুটে সাফ করেন। দেয়াল মুছে পরিষ্কার করেন। আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে সাশ্রয় করেন। সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে—পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। ‘কেউ বলছেন কৃচ্ছ্রতাসাধন করছি।’ এরপর টি-শার্ট পরে লেগে গেলেন। কিন্তু দেখা গেলো প্যারিস থেকে স্যুট আসে। ফ্রেঞ্চ সিপন শাড়ি আসে। ওই সময়ের দামি ব্র্যান্ড সানগ্লাস ‘রেমন’ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ রকম বহু নাটক মিলিটারি ডিক্টেটররা করেছেন। কাজেই চুল কাটাই শুধু নয়, এর বাইরেও অনেক কাজ তারা করেছেন।’ তবে, তাদের এসব উদ্যোগ বেশি দিন টেকে না, মাস ছয়েক থাকে। তারপরই চেহারা পাল্টে যায়। আর এখনও যদি কেউ অন্যায় করে, আমরা তা দেখবো। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। অহেতুক কারও চুল কাটা বা গানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে মাদক কারবার সমাজের একটি বিষফোঁড়া। সরকার মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের দুর্নীতির মামলাসহ চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।’
সংরক্ষিত আসনের আরমা দত্তের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চার হাজার ৫৬৯টি ইউনিয়ন পরিষদে মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়াও সারা বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেয়াল পত্রিকা, স্মরণিকা প্রকাশ, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হবে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠিত হয়।