প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং দেশ পুনর্গঠনে সম্ভাব্য সব সহায়তার আশ্বাস দেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা কাতারের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে সব ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা এবং পুনর্গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই প্রেক্ষাপটে তিনি অমীমাংসিত এবং নতুন ও উদীয়মান দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের জন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নিযুক্ত করেন। কাতারের নেতা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য বাংলাদেশকে একটি কারিগরি দল কাতারে পাঠানোর আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকালে কাতারের প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে আশা প্রকাশ করেন যে তার সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগ এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন, যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার সরকারের প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক, আর্থিক এবং বিনিয়োগ সহায়তা কামনা করেন। প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের নেতাকে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী এবং পেশাদার নিয়োগের আহ্বান জানান। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম এবং আন্তরিকতার জন্য তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ‘রোহিঙ্গা জনগণ যাতে মর্যাদার সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য’ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ আয়োজনে সহায়তা প্রদানের জন্য কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি এই সংকট সমাধানে আরও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহের আহ্বান জানান।
দুই নেতা গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও মতবিনিময় করেন। অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করেন যে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখনও গাজার দুর্দশার বিষয়ে নীরব।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা বুধবার (২৩ এপ্রিল) আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলকে ধন্যবাদ জানান, যেখানে বিপুল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গাজা সংকট নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছে। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা কাতারের প্রধানমন্ত্রী সানন্দে গ্রহণ করেন।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি-বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোর্শেদ ও প্রেস সচিব উপস্থিত ছিলেন।