দেশের সব খাতের শ্রমিকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ অধিকার ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর শ্রম ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশন তাদের প্রণীত ১৯ দফা সুপারিশ তুলে ধরে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, বর্তমান শ্রম আইন অনেকাংশেই বৈষম্যমূলক, যা অনানুষ্ঠানিক খাতসহ বহু শ্রমজীবী মানুষকে সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। এ প্রেক্ষাপটে একটি সর্বজনীন শ্রম আইন এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের সুপারিশ করা হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো হলো–
১. সব শ্রমিকের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও সমান অধিকার: কায়িক, মানসিক ও প্রজনন শ্রমসহ সব খাতের শ্রমিককে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং একই আইনের আওতায় আনা।
২. শ্রমিকদের সংগঠনের অধিকার: সংগঠন, মজুরি দরপত্রে অংশগ্রহণ এবং ধর্মঘটের পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করা।
৩. ন্যূনতম মজুরি: সব খাত ও শ্রেণির শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি।
৪. কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা: যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধে স্পষ্ট আইন ও প্রতিকার কাঠামো প্রণয়ন।
৫. মাতৃত্বকালীন সুবিধা: মাতৃত্বকালীন ছুটি, মাতৃসদন ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।
৬. শিশু শ্রম বন্ধ: শিশু শ্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে তার বিকল্পে শিক্ষা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৭. শ্রম আদালতের সংস্কার: শ্রম আদালত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকবান্ধব ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা।
৮. সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা: পেনশন, চিকিৎসা, দুর্ঘটনা বিমা, অবসর ভাতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করে একটি সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা।
৯. বিশেষত অনানুষ্ঠানিক খাতের অন্তর্ভুক্তি: গৃহকর্মী, পরিবহন শ্রমিক, কৃষিশ্রমিকসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ সুপারিশগুলো শ্রম মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে একটি গণআলোচনার পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়, যাতে সমাজের সব পক্ষ থেকে মতামত নিয়ে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম নীতি প্রণয়ন সম্ভব হয়।