প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ঢাকায় শিগগিরই প্রবাসীদের কল্যাণে প্রবাসী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। হাসপাতালটি বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের দ্বারা পরিচালিত হবে। শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে হাসপাতালটির মালিকানাও লাভ করবেন প্রবাসীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ভবনের প্রবাসী মিলনায়তনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আয়োজিত প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা, অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রবাসে মৃতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং বীমা ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। বারিধারায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাড়ে ৮ বিঘা জমি আছে। এখানে প্রবাসীদের জন্য হাসপাতাল হবে। এটা শুধু প্রবাসীদের চিকিৎসা না, এটার মালিক হবে প্রবাসীরা। শুধু প্রবাসীরাই এখানে শেয়ার কিনতে পারবে। প্রবাসীদের জন্য স্পেশাল ডিসকাউন্ট থাকবে। বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান সরকার গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণ, অধিকার এবং মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যেসব প্রবাসী ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাদের কারামুক্ত করতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত প্রচেষ্টা আপনারা দেখেছেন। শুধু তাই নয়, দেশে আসার পর তাদের জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে অনুদানও দেওয়া হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা রেমিট্যান্স দিয়ে পুরো দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা বড় বড় কথা বলি। দেশ উন্নত হয়ে যাচ্ছে, এরকম নানা ধরনের কথা আমরা বলি, এসব কিছুর মূল অংশীদার হলেন আপনারা (প্রবাসী কর্মীরা)। আপনাদের টাকায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় যখন দুবাইতে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা গ্রেফতার হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে তাদের জেল থেকে গ্রেফতারকৃতদের বের করা প্রায় অসম্ভব, এটা যে কারও পক্ষেই। কিন্ত আমাদের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস সেটি সম্ভব করেছেন। উনার ফোনের মাধ্যমে দুবাই সরকার প্রবাসীদের মুক্তি দেয়।
আসিফ নজরুল বলেন, আমি আগে যখন বিভিন্ন কাজে বিদেশ যেতাম, অনেক সময় এয়ারপোর্টে ও বিভিন্ন জায়গায় প্রবাসীদের সঙ্গে দেখা হতো, কত আন্তরিকতা তারা দেখিয়েছে, বোঝাতে পারবো না। সেই তাদের জন্য কিছু করতে আল্লাহ আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন। কিন্ত আমার কাছে মনে হয় খুব কমই করতে পারছি। আজ যে টাকা আমরা দিয়েছি এটা আপনাদেরই টাকা। এই টাকা প্রবাসী কর্মীদের। আপনারা অবহেলিত ছিলেন, আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীদের সাময়িকভাবে অবস্থানের জন্য ঢাকায় বিমানবন্দরের সন্নিকটে খিলক্ষেত এলাকায় ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ডরমেটরিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ২০০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ভবন নির্মিত হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসা বিদেশগামী ও প্রত্যাবর্তনকারী প্রবাসী নিরাপদে এ সেন্টারে অবস্থান করতে পারবেন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পাবেন। জেলায় স্থাপিত ওয়েজ আর্নার্স সেন্টারকে বিদেশগামী কর্মীদের ওরিয়েন্টেশন ও ব্রিফিং, বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ভাষা শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত প্রবাসী কমপ্লেক্স হিসাবে গড়ে তোলা হবে বলে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
পরে উপদেষ্টা ১২টি পরিবারের মধ্যে ৩৬ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান, প্রবাসী পরিবারের ৬৫ জনের মধ্যে ২১ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি, ১১ জনের মধ্যে বিমা দাবির এক কোটি ৪ লাখ টাকা, ২টি পরিবারের মধ্যে ক্ষতিপূরণ বা বকেয়া বা সার্ভিস বেনিফিটের অর্থ বাবদ ২৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, ৩ জনের মধ্যে চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার এবং ১০ জনের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ মোট এক কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় অনুদান পাওয়া প্রবাস ফেরত কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন।