X
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
৪ বৈশাখ ১৪৩২

‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করার অভিযোগ সত্য নয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ মার্চ ২০২৫, ১৫:০১আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৫:০১

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিশন ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সহিংসতার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা একেবারেই সত্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর এবং এর কোনও শক্ত প্রমাণ নেই।

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এসব তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো–

সহিংসতায় সরকারের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ নেই

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার জন্য দায়ী– এমন দাবির পক্ষে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি করা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের তদন্তে জানা গেছে, বেশিরভাগ মৃত্যুর খবর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা ধর্মীয় বিদ্বেষের ফলস্বরূপ হয়নি বরং ব্যক্তিগত বিরোধ, দুর্ঘটনা, সম্পত্তির দ্বন্দ্ব এবং এমনকি আত্মহত্যার কারণে ঘটেছে। এসব ঘটনা ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে নয়, অন্যান্য আর্থ-সামাজিক বা ব্যক্তিগত কারণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর ধর্মীয় সহিংসতায় শত শত হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রায় কোনও হিন্দু বা অন্য কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কেউ নিহত হয়নি। এ ধরনের সহিংসতা, যা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য তুলনামূলকভাবে শান্ত সময় বিরাজ করছে, যা ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের তদন্ত

বাংলাদেশ পুলিশ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির দাবি তদন্ত করেছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে সংগঠিত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা ঘৃণ্য অপরাধের মাত্র কয়েকটি ঘটনা খুঁজে পেয়েছে। প্রতিবেদনে উদ্ধৃত মৃত্যুর প্রকৃতি ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে নয়, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে হয়েছিল। ইউএসসিআইআরএফ রিপোর্টে এসব তদন্ত উপেক্ষা করায় তাদের গবেষণার পুঙ্খানুপুঙ্খতা ও ন্যায্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

মিডিয়া দ্বারা প্রচারিত মিথ্যা বিবরণ

প্রতিবেদনে সহিংস বিক্ষোভের পর প্রচলিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা দাবির বিস্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই মিডিয়ার সোর্সগুলো প্রায়শই রাজনৈতিক এজেন্ডা দ্বারা চালিত, অন্তর্বর্তী সরকারকে বদনাম করার লক্ষ্যে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে। ইউএসসিআইআরএফের উচিত ছিল, মিথ্যা তথ্য ছড়ায় এমন সম্ভাব্য পক্ষপাতদুষ্ট সূত্রের ওপর নির্ভর না করে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করা।

ইউএসসিআইআরএফের স্বাধীন তদন্তের অভাব

ইউএসসিআইআরএফ যদি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন, দ্বিদলীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করে তবে এটি হতাশাজনক যে, তারা ঘটনাগুলোর নিজস্ব তদন্ত চালায়নি। বরং তারা ভিত্তিহীন দাবি ও একপেশে বক্তব্যের ওপর নির্ভর করেছে, যা বাংলাদেশের সুনাম অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার জন্য কাজ করে। ইউএসসিআইআরএফ যদি যথাযথ যাচাই-বাছাই করতো, তাহলে তারা বুঝতে পারতো, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশেষ করে ধর্মীয় সহিংসতা ততটা ভয়াবহ নয়, যতটা রিপোর্টে বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপট

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষসহ বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গেছে তা কখনও কখনও ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যদিও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত উত্তেজনা থাকতে পারে, তবে এটি বোঝা অপরিহার্য যে, এই ঘটনাগুলো প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় নিপীড়নের চেয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ছিল। পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য এবং জটিল রাজনৈতিক ঘটনাকে ধর্মীয় সংঘাত হিসাবে অতিসরলীকরণ এড়াতে এই পার্থক্যটি গুরুত্বপূর্ণ।

সংখ্যালঘুদের রক্ষায় অঙ্গীকার

এই সময়কালে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তী সরকার সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এই অবস্থানটি তাদের প্রকাশ্য বিবৃতি ও দুর্বল গোষ্ঠীর যে কোনও ক্ষতি প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় স্পষ্ট ছিল। ইউএসসিআইআরএফ রিপোর্ট এই ইতিবাচক পদক্ষেপগুলো বাদ দেয় এবং এর পরিবর্তে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবনতির দিকে মনোনিবেশ করেছে, যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

সবশেষে সরকার জানায়, ইউএসসিআইআরএফ বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতির যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা ভুল তথ্য এবং সুনির্দিষ্ট কিছু প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করা। সহিংসতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী নয় এবং পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে, উদ্ধৃত ঘটনাগুলো ধর্মীয় বিদ্বেষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

/এসও/আরকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টিতে চলে যায় বিদ্যুৎ, মোমবাতির আলোয় পরীক্ষা দিলো শিক্ষার্থীরা
বৃষ্টিতে চলে যায় বিদ্যুৎ, মোমবাতির আলোয় পরীক্ষা দিলো শিক্ষার্থীরা
সিরিয়া ও গাজা ইস্যুতে পুতিনের সঙ্গে কাতারি আমিরের আলোচনা 
সিরিয়া ও গাজা ইস্যুতে পুতিনের সঙ্গে কাতারি আমিরের আলোচনা 
বগুড়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
বগুড়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
হাঙ্গেরিতে চতুর্থ রাউন্ডের খেলা শেষে দুইয়ে তাহসিন
হাঙ্গেরিতে চতুর্থ রাউন্ডের খেলা শেষে দুইয়ে তাহসিন
সর্বাধিক পঠিত
পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা
পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা
ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অন্তর্ভুক্ত না করতে আইনি নোটিশ
ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে অন্তর্ভুক্ত না করতে আইনি নোটিশ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ
দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সংগঠক’কে কুপিয়ে জখম
দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘সংগঠক’কে কুপিয়ে জখম
মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনও ইচ্ছা এ সরকারের নেই: উপদেষ্টা
মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনও ইচ্ছা এ সরকারের নেই: উপদেষ্টা