চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশের। একইসঙ্গে বাড়ছে ওই দেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ। চীনা ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ কম, কমিটমেন্ট চার্জ বেশি এবং এ কারণে অন্য দেশের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের চাপ থেকে চীনা ঋণের চাপ বেশি। অপরদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল ও পরিশোধের সক্ষমতা কমছে। এ প্রেক্ষাপটে চীনা ঋণের পুনঃতফসিলীকরণ করার দাবি জোরালো হচ্ছে। যদি ওই ঋণের চাপ কমানো সম্ভব হয়, তবে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। সামগ্রিকভাবে এটি দেশের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ‘বাংলাদেশ-চায়না রিলেসন্স: এ ফিউচার আউটলুক’ শীর্ষক সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের প্রয়োজন আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে চীনকে আমরা ঋণ পরিশোধ করছি। এর পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।’
ঋণ পরিশোধের পরিমাণ যত বাড়বে, অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে অর্থায়নের পরিমাণ তত কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি চীনের ঋণের শর্ত সহজ করতে পারি, তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে বেশি অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হবো।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘একইসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, সেগুলো যেন সঠিক পর্যালোচনা করে নেওয়া হয়।’
চীনা ঋণের অবস্থা
বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অন্যান্য কাজে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশটির পাওনা ৫৬০ কোটি ডলারের ঋণ ফেরত দিতে হবে। চীনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ২ থেকে ৩ শতাংশ। বিশেষ করে বাণিজ্যিক এবং জ্বালানি খাতে এই ঋণের পরিমাণ ৩ শতাংশের নিচে হয় না। ওই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ কম হয়। এর ফলে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ বেশি থাকে। এছাড়া এর কমিটমেন্ট চার্জও বেশি থাকে।
এর বিপরীতে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপান থেকে নেওয়া ঋণের হার অনেক কম এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদও দীর্ঘ।
চীনের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে দেশটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সোমবার (১৪ অক্টোবর) ‘বাংলাদেশ-চায়না রিলেসন্স: এ ফিউচার আউটলুক’ শীর্ষক সেমিনারে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কোনও প্রস্তাব এলে আমরা উভয়পক্ষ বসে আলোচনা করবো।’
পুনঃতফসিলীকরণ দরকার
চীনা ঋণের পুনঃতফসিলীকরণ করা হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে।
এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের ঋণের দরকার ছিল এবং এ কারণেই ঋণ নেওয়া হয়েছে।’
পুনঃতফসিলীকরণ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণের পরিমাণ বেড়েছে এবং একইসঙ্গে বাজেটের ওপর এর চাপ বাড়ছে। যদি আলোচনার মাধ্যমে ঋণের শর্ত সহজ করা সম্ভব হয়, তবে সেটি আমাদের জন্য ভালো হবে।’
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে এবং তখন বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার খরচ আরও বাড়বে।’
বৈদেশিক সহায়তার শর্ত যত সহজ হবে, সেটি বাংলাদেশের জন্য ভালো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।’