নির্বাচন কমিশন না থাকায় এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহ করবে না নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব শফিউল আজিম সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এমনটা জানান। বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নিয়ে এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি, নতুন ভোটার নিবন্ধন ও ভোটার স্থানান্তর সংক্রান্ত অনলাইন সভার শুরুতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ইসি সচিব।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ কমিশনের। কমিশন ছাড়া ইসি সচিবালয় এটি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তবে নিজ উদ্যোগে নাগরিকের ইসির মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে গিয়ে সারা বছর ভোটার হতে পারছেন। ভোটার হতে গিয়ে কোনও নাগরিক যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহ করতে ইসির অনুমোদনসহ নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়ে। ফলে নির্বাচন কমিশন না থাকায় ইসি সচিবালয় সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আইনি বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে জানুয়ারিতে খসড়া ভোটার এবং মার্চে চূড়ান্ত ভোটার প্রকাশ করবে।
সর্বশেষ ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ওই সময় ১৬ বছর বয়সী যেসব নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল আগামী ১ জানুয়ারি তাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে। ফলে এবারের হালনাগাদে ২০২২ সালের সংগ্রহ করা তথ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের ক্ষেত্রে বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইসিকে কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য যাচাই, এন্ট্রি করা ও ছবি তোলাসহ বেশ কিছু আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ করতে হয়। এসব কাজের জন্য ইসির অন্ততপক্ষে তিন মাসের সময় প্রয়োজন হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী অধিশাখা) মো. আব্দুল মমিন সরকার বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সাতটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এ ক্ষেত্রে পাসপোর্ট থাকলেই প্রবাসে এনআইডি দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট নাগরিকের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে যদি প্রমাণ হয় তিনি আসলেই বাংলাদেশি নাগরিক, তখনই তিনি এনআইডি পাবেন।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার কোনও নির্দেশনা ইসির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসে নাগরিকেরা যেসব তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। সেগুলো দেশে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে আমাদের কর্মকর্তারা তদন্ত করেন। এতে যদি তাদের কাগজপত্র ঠিক থাকে তখনই তাকে এনআইডি দেওয়া হয়। কেবল পাসপোর্ট থাকলেই তাকে এনআইডি দেওয়া হয় না।
ইসি সচিব শফিউল আজিম বলেন, প্রবাসী ভোটার সাতটা দেশে চলমান আছে। যেখানে প্রবাসী আনুপাতিক হারে বেশি সেখানে আস্তে আস্তে চালু করবো। শিগগিরই কানাডা এ অস্ট্রেোলিয়ায় চালু হবে এই সেবা। এছাড়া যুক্তরাজ্যে লন্ডনের পর এবার বাকিংহামেও চালু হচ্ছে।
একজনের আঙুলের ছাপ অন্যজনের সঙ্গে মিলে গেলে (ম্যাচ ফাউন্ড) সমাধান পেতে মাঠ পর্যায় থেকে ভোক্তভোগীকে ইসিতে আসতে হয়। এ বিষয়ে ইসির উদ্যোগ জানতে চাইলে সচিব বলেন, এখন থেকে আর ঢাকার আসতে হবে না। উপজেলা কার্যালয়েই সমাধান পাওয়া যাবে। বিষয়টি ডিসেন্ট্রালাইজ (বিকেন্দ্রীকরণ) হয়ে গেছে। মাঠেই সেবা পাবেন।
ইসি সচিব আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য এনআইডি সেবা সহজ করা, জনবান্ধন ও দুর্নীতিমুক্ত করা। উপজেলা অফিসগুলো যাতে সেবাকেন্দ্রে পরিণত হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সেবাপ্রার্থীদের কোনও ধরনের হয়রানি করা যাবে না। দুর্নীতি-অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।