অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মকাণ্ডে সহায়তা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কীভাবে তারা সহায়তা করতে পারে—তা নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এক মাসের কিছুটা বেশি সময়। আজকের বৈঠকে পরিবর্তিত যে পরিস্থিতি এবং সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে ধ্যানধারণা এবং সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই সফর একটি ভিত্তি হবে। সামনে আমরা এই আলোচনাকে বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ঢাকা সফররত ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য সচিব, শ্রম সচিব, স্বরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করবো। কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।’
সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে গভর্নরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে। সেখানকার বৈঠকে হয়তো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো আলোচিত হতে পারে।’
মার্কিন দল কী আশ্বাস দিয়েছে, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথম যে আশ্বাস সেটি হচ্ছে— অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় এবং সেটির প্রতিফলন হিসেবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসের প্রথমে তারা প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করেছি, তার সব খাতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।’
ভারত থেকে কোনও বার্তা নিয়ে এসেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।’
প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা আমরা চেয়েছি কিনা, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সেটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। এ ধরনের কোনও আলোচনায় আমরা মনে হয় এর আগে কখনও যাইনি। আমি অন্তত এ ধরনের কোনও আলোচনা করিনি।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় এসেছে।