অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য আলোচনা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য একটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসা নিয়ে আলোচনা করছে দুই দেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদানের আগে মার্কিন দলটি ঢাকা আসবে। দলে হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউএসএইড, ইউএসটিআরসহ বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে একটি সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি মাল্টি-এজেন্সি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। এবারও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশ কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য মার্কিন দলটির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
মোটা দাগে অর্থনৈতিক, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অংশীদারত্ব নিয়ে দুই দেশ কাজ করে থাকে। এই পাঁচটি ক্ষেত্রে কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করা যায়, সেটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে বলে জানায় সূত্রটি।
বাংলাদেশ কী চায়
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে সংকটের মধ্যে রয়েছে। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রফতানি আয় কমছে, অপরদিকে আর্থিক খাতেও চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সরকারের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দরকার। এর আগে বাংলাদেশের কর খাত সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সহযোগিতা পেলে এ খাতে উন্নতি করা সম্ভব।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা—এই সরকারের একটি সবচেয়ে বড় এজেন্ডা এবং এ বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ বিষয়ে উভয়পক্ষের মাঝে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে আরেকটি সূত্র।
সংশ্লিষ্ট দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শ্রম-অধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রম-অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে মার্কিন ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশনের তহবিল থেকে অর্থায়ন করার একটি সুযোগ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার মধ্যে একটি মিল আছে। উভয়পক্ষ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের মধ্যে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।
নতুন সুযোগ
২০১৪ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্রমশ নিম্নগামী ছিল। ২০১৭ সালে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেও ২০১৮ নির্বাচনের পর আবারও সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা দেখা দেয়। এরপর ২০২১ সালে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৩ সালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে বাংলাদেশে মানবাধিকার সমস্যা আছে। এটি না লুকিয়ে সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো বন্ধু দেশগুলোর সহায়তা নেওয়া হলে সেটি সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সরব ছিল এবং এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে—যেখানে উভয় দেশ সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশ এরইমধ্যে গুম বিষয়ক কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সুফল পাওয়ার জন্য বাংলাদেশি কূটনীতিকদের আলোচনা শুরু করা দরকার বলে তিনি জানান।