গুম হওয়া প্রত্যেককে খুঁজে বের করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরের মূল কনফারেন্স রুমে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে তোলা আলোকচিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠান ‘জান ও জবান’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হতো যদি দিবসটি (গুম দিবস) পালন করতে না হতো। একটা দেশ স্বাধীন হয়েছে যাতে সবাই মুক্তি পায়। কিন্তু সেই সভ্য দেশে আমাদের গুম নিয়ে কথা বলতে হয়। তাও স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর। আর যেন কেউ গুম না হয়, সে জন্য আমরা গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছি। এর অর্থ হচ্ছে কেউ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে, বিরুদ্ধমত দমন করতে যেন কোনোভাবে কাউকে গুম হতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করা। গুমের কোনও ন্যায্যতা-অন্যায্যতা নেই। এটা শুরু থেকেই অন্যায্য ও অন্যায়।’
প্রত্যেক গুম হওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার কোনও অভাব হবে না জানিয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘গুম হওয়া পরিবারগুলোর কষ্ট লাঘবে তাদের পাশে দাঁড়াবো। অন্তত আমরা সেই সরকারের অংশ নই, যারা এই গুমের কাজগুলো করেছিল। যারা গুমের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার চাওয়া তো বেশি কিছু আশা করা নয়। আয়নাঘরের মতো নির্যাতন ঘর তৈরি করে কোনও সরকার যেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারে, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমাদের এখন সময় আনন্দ করা না, আমাদের এখন কাজ হলো যে পরিবারগুলোর গুম হওয়া লোকজন ফিরে আসেনি, তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া। তাদের ফিরিয়ে দিতে না পারি, তাদের অন্তত গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ দেওয়া। গুম হওয়া পরিবারগুলোর শিশুদের কান্না আমরা দেখেছি মায়ের ডাকের মাধ্যমে। আমরা যেন এই আন্দোলন চলমান রাখি।’
চিত্রগ্রাহক মোশফিকুর রহমান জোহান বলেন, ‘আজ থেকে এক মাস আগেও ভাবতে পারিনি যে কাজগুলো করেছি, সেগুলো দেখাতে পারবো। কিন্তু এখনও ভালো সন্তুষ্টি নেই। কেননা যাদের নিয়ে কাজ করেছি, তাদের এখনও খোঁজ পাইনি।’
এ সময় আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সিনিয়র গবেষক তাসকিন পারভীন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ আরও অনেকে।
এরপর ‘জান ও জবান’ শীর্ষক আলোকচিত্রী প্রদর্শনী উদ্বোধন করে তা পরিদর্শন করেন অতিথি ও ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো। প্রদর্শনীটি ৩০ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি চলছে জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে।