নির্বাচন কখন হবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেবে। তবে এটার কোনও টাইমলাইন বলা সম্ভব নয়।’
বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাপানের রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ওই অভ্যুত্থানের ডিমান্ড হচ্ছে দেশের সার্বিক সংস্কার, দেশে অধিকতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। দে ওয়ান্ট ডিপার রিফর্মড। আর এজন্য কতটা সময় দরকার আমরা তা জানি না। প্রধান উপদেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে—দেশের যতটা সংস্কার প্রয়োজন সেটা করা। আর সেটা করেই এই সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে। কাজেই কখন নির্বাচন হবে, এটা বলা সম্ভব নয়। এটা ছয় মাস বা এক বছর পরে যে হবে, তার কোনও টাইমলাইন বলা যাবে না। সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেবে।’
তিনি জানান, ব্রিটেনের পক্ষ থেকে তারা আগ্রহ ব্যক্ত করেছে—বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে তারা কারিগরি সহায়তা দেবে। বাংলাদেশে নির্বাচনটা বলা যায় একটি বড় সমস্যা। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠানের বিষয়টি আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। অবাধ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ব্যবস্থা এখনও তৈরি করতে পারিনি।
সরকার দুই সপ্তাহ হলো দায়িত্ব নিয়েছে। এখন পরিস্থিতি কী? সব কিছু কী সরকারের নিয়ন্ত্রণে? সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি দেশের পরিস্থিতি পুরোটাই স্বাভাবিক। আপনারা নিজেরা গিয়েও দেখতে পারবেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিনা? তবে, এটা ঠিক কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন- পুলিশের আত্মবিশ্বাস এখনও পুরোটা ফিরে আসেনি। কিন্তু বর্তমানে সব থানায় পুলিশ তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা কাজ করছে। কাজেই সারা দেশের পরিস্থিতিই এখন স্বাভাবিক।’
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা খুবই কঠিন প্রক্রিয়া। ওনারা বলেছেন দেখবেন। কতটুকু সহায়তা করা যায়। কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার কথা বলা হয়নি। সার্বিকভাবে বলা হয়েছে। কোনও বিশেষ দেশের বিষয় নয়। দেশ থেকে যে টাকাটা চলে গেছে। সেটা ব্রিটিশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব জায়গায় মানি লন্ডারিং হয়েছে, সেটা খুঁজে বের করা ও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই চুরির টাকা ফিরিয়ে আনা সরকারের একটি বড় লক্ষ্য। সরকার চায় এই টাকা ফিরিয়ে এনে দেশ পুনর্গঠনে ব্যবহার করা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রিস্টোর করা। ৫-৮ (আগস্ট) তারিখের মধ্যে দেশে কোনও সরকার ছিল না। ৮ তারিখ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দিন থেকেই কাজ শুরু করেছে। একটা কথা বলতে পারি, সব কিছুই সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। তবে এজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে।’
দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন, দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এই সরকারের ম্যান্ডেট হচ্ছে—বৃহৎ পরিসরে সব কিছু সংস্কার করা। কাজেই যেসব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনলে বা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করলে, সমাজ ব্যবস্থা পুনর্গঠন হবে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনও রয়েছে। দেশে যাতে একটি কার্যকর সংস্কার হয়, সেটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বর্ডার লাইন। কাজেই এ বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছে। সরকার এই রিফর্মটা করে তাড়াতাড়ি একটি নির্বাচন দিতে পারে। আর নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা বাকিটা করবে।’