সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই জায়গায় সমাজকল্যাণের একটি নৈতিক দায়িত্ব আছে।
তিনি বলেন, ‘আজকের থেকে তাদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলো। প্রতিটি হাসপাতাল থেকে রেজিস্টার্ড রোগী যারা আছেন, তাদের তালিকা আমরা নেবো। আমরা ডেটাবেজ তৈরি করবো। তাদের তথ্য দিয়ে আমরা একটি ডেমোগ্রাফিক ম্যাপ করবো।’
সোমবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের হাসপাতালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দারস্থ হবে, এই ডেটাবেজ তৈরি করতে। ম্যাপ করে আমরা ম্যাপের মধ্যে প্রায়োরিটি সেট করবো। প্রায়োরিটির ভিত্তিতে আমাদের অ্যাকশন প্ল্যান করবো এবং আমরা কাজে নেমে যাবো। এই বাচ্চারা সুস্থ না হলে, পুনর্বাসিত না হলে, এই দেশ সুস্থ হবে না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যত প্রোগ্রাম, প্রকল্প আছে সেগুলো আমরা এই বাচ্চাদের ওপর ফোকাস করে সাজাতে যাচ্ছি।’
এসময় সাংবাদিকের প্রতি ঢালাওভাবে আহতদের চিকিৎসাধীন কক্ষে প্রবেশ না করার অনুরোধ জানান সমাজকল্যান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আপনারা ঢালাওভাবে যাবেন না তার মানে এই নয়, আমরা তথ্য লুকাবো। আপনারা একান্ত প্রয়োজন হলে হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে কাজ করবেন। আমরা চাই, আপনারা একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে কাজ করুন। এখানে অনেকেই আছে যাদের পুনরায় আবার ইনফেকশন হয়েছে। আপনারা অনুমতি নিয়ে যাবেন এবং ছোট টিম করে যাবেন।’
উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, ‘আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া ছাড়া আমাদের আর কিচ্ছু নেই। তাদেরকে স্মরণ রাখার জন্য যেটা করার আমরা করবো। যেমন- আমরা ১৯৭১ ভুলিনি, ২০২৪ কিন্তু মুছে যাবে না এদেশের ইতিহাস থেকে, এদেশের জনগণের স্মৃতির থেকে। তাহলে এটাকে সেই জায়গায় একটি বিপ্লব, পরিবর্তন, একটি আন্দোলন যেই নামেই আমরা ডাকি না কেন, এটি ঘটে গেছে এবং তা করেছে আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ তরুণ সমাজ। তাদেরকে স্যালুট জানাই। ঠিক যেমন- দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভাবি, তাদেরকে স্যালুট জানাই। আমরা নতুন করে আবার ভাবতে শুরু করলাম— একটি নতুন দেশ এটাকে আমরা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমাদের পেছনের ভুলগুলোকে আমরা দ্বিতীয়বার আর ঘটতে দেবো না। আমাদের বাচ্চারা যারা যুদ্ধ করলো, তাদের প্রতিষ্ঠা, পুনর্বাসন, তাদের সুস্বাস্থ্য আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তাদেরকে আমাদের স্কুলে, কর্মে, মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে একটা নিরাপদ জীবন দিতে হবে। এইটুকু আমরা না করতে পারলে আমরা একটি অকৃতজ্ঞ জাতি বলে আমি মনে করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা তাদের জীবন দিয়েছে বলে আমি এই রূপে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পক্ষে এক মুহূর্তের জন্য সেটি ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের ডাক্তাররা যেই যত্নের সঙ্গে আমাদের বাচ্চাদের সুচিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটি প্রশংসনীয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার যে টিম আছে, দেশে নতুন করে তাদেরকে দেখছি। তাদের ছাড়া আমরা আমাদের আরও বাচ্চাদেরকে হারিয়ে ফেলতাম। আজকে যে সেবা আমি বাচ্চাদের জন্য দেখালাম, সেটি একদিন সারা দেশের মানুষের জন্য তৈরি হবে বলে আমি মনে করি।’