X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

 প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে পদোন্নতি বঞ্চিত ২০০ উপসচিব

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:৫৭আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:৫৮

প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে পদোন্নতিবঞ্চিত ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিব থেকে উর্ধ্বতনরা সরকার পরিবর্তনের পর তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বুধবার (১৪ আগস্ট) তারা এই স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, উপসচি থেকে উর্ধ্বতন পর্যায়ে  কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিনিয়র সার্ভিস পুল গঠন করার দাবিতে স্মারক লিপি দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া ২৫তম ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২তম  ব্যাচের কর্মকর্তারা। বুধবার (১৪ আগস্ট) আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরারবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকিলিপিতে বলা হয়, সচিবালয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী কার্য সম্পাদনের জন্য উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিনিয়র সার্ভিস পুল গঠন করা হয়। 'সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২' অনুযায়ী প্রশাসন ক্যাডার হতে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ২৫টি ক্যাডার হতে ২৫ শতাংশ উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে এ পুল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদিও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার ৮৯৯ জন (৯ দশমিক৬২ শতাংশ) এবং অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৪৬ হাজার ২৩ জন (৯০.৩৮ শতাংশ)।

পরবর্তী পদোন্নতি, অর্থাৎ যুগ্মসচিব ও তদুর্দ্ধ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পিএসসির সুপারিশ করাস্ব স্ব ব্যাচের সম্মিলিত মেধাতালিকা, সরকারি চাকরি আইন, পদোন্নতি বিধিমালা, সুপ্রিমকোর্টের রায় কোনও কিছুই মানা হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের সকল কর্মকর্তার নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে পদোন্নতি নিশ্চিত থাকলেও অন্য ২৫টি ক্যাডারের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা আরোপ করে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক জুনিয়র ব্যাচের সঙ্গে স্বেচ্চাচারমূলক নামমাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের অত্যন্ত মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য দুই শতাধিক কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠতা হারিয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে তাদের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করতে হচ্ছে।

বিগত সরকার আমলে প্রশাসন ক্যাডারের দুবৃত্ত কতিপয় কর্মকর্তা বে-আইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একটি মেধাশূন্য, মেরুদন্ডবিহীন, রাজনৈতিক পদলেহনকারী জনপ্রশাসন তৈরি করেছে। তাদের প্রেতাত্মা এখনও সক্রিয় থেকে একই পদ্ধতি অনুসরণ করছে-যা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল বর্তামন সরকারের নীতি-আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২৫ টি বিশেষজ্ঞ ক্যাডার হতে সম্পূর্ণ মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আগত উপসচিবদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে প্রকারান্তরে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে পেশাভিত্তিক ও দক্ষ জনবলের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আবার তাদের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতাকে একদিকে সচিবালয়েও যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না, অপরদিকে স্ব-স্ব ক্যাডারও তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিসিএস-এর কোনও একটি সার্কুলারের মোট কর্মকর্তার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের এবং ৮০-৮৫ শতাংশ অন্য ২৫টি ক্যাডারের। কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতির সময় চিত্রটি একদম পাল্টে যায়। প্রশাসন ক্যাডার ১৫-২০ শতাংশ থেকে উপসচিব করা হয় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ এবং অন্য ২৫টি ক্যাডার  ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ থেকে উপসচিব করা হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। আবার যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির সময় চিত্রটি আবার একদম বিপরীত হয়ে যায়। সম্পূর্ণ মেধা এবং পেশাভিত্তিক বিশেষঞ্জ ক্যাডার হতে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তাদের স্ব-স্ব প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচের সাথে ১ শতাংশকেও পদোন্নতি দেওয়া হয় না। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের যে ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়, সেই ব্যাচের অন্য ২৫ টি ক্যাডারের হাতে গোনা ২/১ জন ছাড়া কাউকেই পদোন্নতি দেওয়া হয় না।

সর্বশেষ যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির আদেশে ২৫ ক্যাডারের সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যারা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক সিনিয়র এবং বহু আগেই যোগ্যতা অর্জন করা সত্ত্বেও বারবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে অবশেষে দৈবচক্রে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের ৯০ শতাংশ কর্মকর্তারা এখনও পদোন্নতির জন্য বিবেচনাতেই আনা হচ্ছে না। অথচ এখন প্রশাসন ক্যাডারের ২৪ ব্যাচকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে।

চাকুরিজীবীদের জন্য জ্যেষ্ঠতা কেবল পদোন্নতির অন্যতম প্রধান শর্তই নয়, এটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলার মেরুদন্ড। সরকারি কর্মকর্তারা পিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত যে ব্যাচে যোগদান করেন সেটাই তাদের নিয়মিত ব্যাচ এবং পিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত সম্মিলিত মেধাতালিকাই জ্যেষ্ঠতার একমাত্র ভিত্তি। জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানো আইন ভঙ্গের শামিল। সৃষ্ট বৈষম্যের ফলে জ্যেষ্ঠ্যতা হারানো ও পদোন্নতি বঞ্চিত ২৫ ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রায় ২০০ উপসচিব বর্তমানে এক দীর্ঘ জটের সৃষ্টি করা হয়েছে। বছরের পর বছর এভাবেই বিনষ্ট হচ্ছে জনগণের করের অর্থে তিলে তিলে গড়ে তোলা একঝাঁক মেধাবী, জ্যেষ্ঠ ও দেশপ্রেমিক জনশক্তি, যারা প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জাতির জন্য লাগসই কৌশল নির্ধারণকারী ও দক্ষ বাস্তবায়নকারী হতে পারতো।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত অন্য সকল ক্যাডার হতে মেধাতালিকাভুক্ত সবচেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণকে উপসচিব হিসেবে পুলভুক্ত করে তাদেরকে পরবর্তী পদে পদোন্নতির জন্য স্বাভাবিক নিয়মে কেন বিবেচনা করা হয় না। কেন আমন্ত্রণ জানিয়ে সরকারের পুলভুক্ত করে তাদেরকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছে, কেন রাষ্ট্র ও সরকারকে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এর কোন সদুত্তর কি এসএসবি বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে? এই মেধাবী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কী অপরাধ? তারা কেন আক্রোশের শিকার? তারা কেন পরিকল্পিত মেধাহত্যাযজ্ঞের শিকার?

/এসএমএ/এস/
সম্পর্কিত
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
সচিবালয়সহ সব সরকারি দফতরের নিরাপত্তা জোরদার করছে সরকার
 ৯ দফার বাস্তবায়ন চায় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ
সর্বশেষ খবর
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
আব্বাস, কেলিদের নিয়ে বাংলাদেশে আসছে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল
আব্বাস, কেলিদের নিয়ে বাংলাদেশে আসছে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল
শ্যাম্পুর আগে ৩০ মিনিটের যত্নে চুল হবে সিল্কি
শ্যাম্পুর আগে ৩০ মিনিটের যত্নে চুল হবে সিল্কি
বাসের ধাক্কায় সাবেক পুলিশ সদস্য নিহত
বাসের ধাক্কায় সাবেক পুলিশ সদস্য নিহত
সর্বাধিক পঠিত
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস