যুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হতে পারি, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা কেউই বিজয়ী হতে পারবো না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে একদিনে দেশব্যাপী তিন কোটি গাছের চারা রোপণের ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে শুধু বাংলাদেশ না পৃথিবীর যেকোনও দেশের জন্য যে বার্তা প্রযোজ্য, সেটা হচ্ছে যুদ্ধ করে আমরা বিজয়ী হতে পারি কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা কেউই বিজয়ী হতে পারবো না। প্রকৃতি কিন্তু যুদ্ধের কোনও বিষয় না। পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই যুদ্ধ বিরাজমান। কিন্তু সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হচ্ছে— প্রকৃতির সঙ্গে যে যুদ্ধে আমরা আছি। সুতরাং এখানে একটা যুদ্ধ বিরতির প্রয়োজন। এরপরে যে শান্তি আসবে সেই শান্তিকে পুঁজি করে আমরা একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু এই সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের কোনও ভূমিকা নাই। সারাবিশ্ব সে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে বাংলাদেশ তার শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ করছে। কিন্তু ক্ষতির দিক থেকে আমরা সবচেয়ে এগিয়ে। যতদিকেই দেখি, আমাদের ক্ষতির কোনও শেষ নাই।
মন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগেও ঢাকার তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এটা আমরা কখনও কল্পনা করেছিলাম? এই যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, এটা হচ্ছে নতুন বাস্তবতা। গত বছর যেটা দেখলাম এই বছর তার বেশি এবং আগামী বছর তার থেকেও বেশি হবে। এবং এটা হয়তো আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমরা যে ডেঙ্গুর কথা বলি, এটা কীভাবে বিস্তার হচ্ছে দেখেন। আগে শুধু বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু হতো কিন্তু এখন আমরা সারা বছরই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের খবর পাচ্ছি। আগে এটা ছিল শুধু আমাদের মহানগর এলাকায়, এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে গেছে। এটা কেন ছড়িয়ে যাচ্ছে? কারণ এটা বিস্তারের জন্য যা প্রয়োজন যেমন, তাপমাত্রা, বৃষ্টি এবং আর্দ্রতা সেগুলো রয়েছে আমাদের এখানে। আর এর সবই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এ কারণেই বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন, এটাই মূল বিষয়।
এসময় সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রশংসা করে বলেন, আমি গর্বিত এবং আনন্দিত এটা ভেবে যে আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে যারা একদিনে ৩ কোটি গাছ লাগাতে পারে।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. সালাহ উদ্দিন মিয়াজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী একনিষ্ঠভাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। আর গ্রামীণ ব্যাংকও এর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। একদিনে ৩ কোটি গাছ লাগানোর যে উদ্যোগ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়েছে তা একটি মাইলফলক। গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সুন্দর পরিবেশ গড়তেও কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, শুধু গাছ লাগালেই হবে না, পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগাতে হবে এবং গাছ লাগানোর পরে অন্তত দুই বছর এগুলোর পরিচর্যা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ বলেন, আমাদের বায়ুদূষণ, নদীদূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টির চাহিদা মেটানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং পরিবেশরক্ষায় আমাদের বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ২০২০-২৩ সাল পর্যন্ত আমরা সারাদেশে ৩৯ কোটি ৫৩ লাখ ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেছি।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদের সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার সাহাসহ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সকল নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের চত্বরে গাছের চারা রোপণ করা হয়।