জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পর এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আইন করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী এ সংক্রান্ত ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি বিল–২০২৪’ তোলেন। পরে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
১৯৬১ সালের একটি অধ্যাদেশের আওতায় ময়মনসিংহে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন এ প্রতিষ্ঠানকে নতুন আইনের অধীনে আনা হচ্ছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্য গভর্নমেন্ট এডুকেশনাল অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ অনুযায়ী বাংলাদেশে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। কিন্তু বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো যুগোপযোগী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করেছে। যেমন– জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠায় প্রণীত আইন। উল্লিখিত অর্ডিন্যান্সে দেওয়া ক্ষমতাবলে গঠিত ১৪ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস সরকারের পূর্বানুমতি নিয়ে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, ময়মনসিংহ; রেজুলেশন ২০০৪’ নামে একটি রেজুলেশন প্রণয়ন করে এবং রেজুলিউশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই নেপের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা সমীচীন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, নেপ-এর আইন বা বিধি না থাকার কারণে শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থা/প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীন কর্মকর্তারা প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে একাডেমিতে যোগদান করেন। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তার গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের একাডেমির মূল কাজে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন আইন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সনে জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ (জেটিসি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে ২ বৎসর মেয়াদি ইন্টারমিডিয়েট ইন এডুকেশন (আই এড) কোর্স পরিচালিত হয়। ময়মনসিংহ ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, রংপুর ও যশোরে এরকম আরও পাঁচটি জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ (জেটিসি) স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জুনিয়র ট্রেনিং কলেজগুলো (জেটিসি) রূপান্তরিত হয়ে কলেজ অব এডুকেশন নামে যাত্রা শুরু করে। কলেজগুলোতে ৩ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব আর্টস ইন এডুকেশন (বিএ ইন এডুকেশন) কোর্স চালু হয়।
১৯৭৮ সালে ঢাকার কলেজ অব এডুকেশন রূপান্তরিত হয় সরকারি কবি নজরুল কলেজে। অন্য চারটি কলেজ অব এডুকেশন (চট্টগ্রাম, ফেণি, রংপুর ও যশোর) টিচার্স ট্রেনিং কলেজে উন্নীত হয়। এছাড়া ১৯৭৮ সালে ময়মনসিংহের কলেজ অব এডুকেশন ‘মৌলিক শিক্ষা একাডেমি’ (Academy for Fundamental Education) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)’ । ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে একাডেমি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
নেপ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে বার্ষিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানের জন্য গবেষণা পরিচালনা। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনার, সভা, ওয়ার্কশপ, সম্মেলনের আয়োজন ও অংশগ্রহণ করা।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ইউনিট, এনসিটিবি, পিটিআই ও ইউআরসি’র বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করে।